নতুন দুটি উচ্চ ফলনশীল জাত প্রতিস্থাপন করে অনেক কৃষক আগের বছরের চেয়ে ভাল ফলন পাচ্ছেন। কুষ্টিয়ায় পুরোদমে শুরু হয়েছে আমন মৌসুমের ধান কাটা।
কৃষি বিভাগ বলছে- এবার প্রতি হেক্টরে ৫০ কেজি করে বেশি চাল পাওয়া যাবে। বাড়তি এ উৎপাদন খাদ্য নিরাপত্তা ও জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
কুষ্টিয়া জেলায় এবার যে ৮৮ হাজার ৯১৯ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় তা অর্জিত হয়েছে। চাষে জমির পরিমাণ বাড়ানো না গেলেও নতুন নতুন উচ্চ ফলনশীল জাত প্রতিস্থাপন করে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
ব্রিধান ৩৯, ব্রিধান ৪৯, স্বর্ণা ও বিনাধান ৭- এই জনপ্রিয় জাতগুলোকে প্রতিস্থাপন করে আধুনিক জাত ব্রিধান ৭১, ব্রিধান ৭৫, ব্রিধান ৮৭ ও বিনাধান ১৭ এর চাষ বাড়ানোর চেষ্টা করেছে কৃষি বিভাগ।
কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপ-পরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ বলেছেন, এর মধ্যে ব্রিধান ৭৫ ও ব্রিধান ৮৭ এর আবাদ বাড়াতে সক্ষম হয়েছে প্রায় ৪০ ভাগ জমিতে। ব্রিধান ৭৫ কুষ্টিয়া জেলায় ২০২১ সালে চাষ হয়েছিল ৩ হাজার ৬শ ৫১ হেক্টর জামিতে, যা ২০২২ এ ১১ হাজার ৭শ ৩২ হেক্টরে এবং এবার (২০২৩) ১৬ হাজার ৪শ ৩৭ হেক্টরে উন্নীত হয়েছে। আর ২০২১ সালে ব্রিধান ৮৭ চাষ হয়েছিল ৭হাজার ৭শ ৩১ হেক্টরে। সেটিও ২০২২ এ ১৩ হাজার ৯শ ৮০ হেক্টরে এবং ২০২৩এ ১৯ হাজার ৫শ ৩৬ হেক্টরে উন্নীত হয়েছে। এর পাশাপাশি হাইব্রিড ধানের জাতগুলোর চাষও বেড়েছে। ২০২১ সালে জেলায় হাউব্রিড ধানের চাষ ছিল ১০ হাজার ৪শ ৭৭ হেক্টর জামিতে সেখানে এবার চাষ হচ্ছে ১৬ হাজার ৪শ ৭৮ হেক্টরে। এরমধ্যে যে ২০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে সেখানে কৃষকরা ভাল ফলন পাচ্ছেন। কোনো কোনো এলাকায় বিঘায় ২০ মণেরও বেশি ধান পাচ্ছেন তারা।
সদর উপজেলার বরিয়া গ্রামের সাইদুল ইসলাম বলেন, এবার কীটনাশক বেশি দেয়া লেগেছে। কিন্তু ধানে কোনো চিটার গুড়া আসেনি। তাই এবার ফলন বেশি পাচ্ছি। গতবার যেখানে ১৪মন ফলন পেয়েছিলাম এবার সেখানে ২০ মণও পাচ্ছি।
একই গ্রামের নুর আলম বলেন, পোকার আক্রমণ বেশি ছিল, ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। এবার ফলন হাইব্রিডে ২৫মনও পেয়েছি। আর বিনা-১৭ ধানে ২০ মন করে ফলন পেয়েছি।
তবে, কোনো কোনো এলাকা থেকে পোকা ও রোগের কারণে ফলন বিপর্যয়ের অভিযোগও আসছে। কুষ্টিয়ার বাইপাস রোড এলাকার চাষী দেলবার বলেন, এবার ব্রিধান ৭৫ আবাদ করেছি। বেশি পোকা লেগেছে। বারবার ওষুধ দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। কাটার আগ মুহূর্তেও স্প্রে করা লেগেছে। আমাদের খরচ বেড়েছে, লাভ থাকছে না।
সেখানকার আরেক কৃষক জিরান বলেন, আবহাওয়া খারাপ, পোকা ও রোগ বেশি। মাঠে ঢুকলে ধানের গু গায়ে লেগে যাচ্ছে। এখানে ১২-১৫ মনের বেশি ধান হচ্ছে না। এবারের মতো মার দেখি নাই। আমার জমিতে অর্ধেক শিষই মার গেছে (চিটা হয়েছে)।
কুষ্টিয়া সদরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার জাহিদ বলেন, রোগ-পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে যেসব কৃষক খরচ করেছে বেশি, সময়মতো ছত্রাকনাশক দিয়েছে তারাই ভাল ফল পেয়েছে।
তবে রোগ পোকার আক্রমণ বেশি থাকলেও ব্রিধান ৭৫ ও ৮৭ উচ্চফলনশীল জাত প্রতিস্থাপন করতে পারায় হেক্টরপ্রতি ৫০ কেজি চালের উৎপাদন বাড়ছে বলে হিসাব দিয়েছেন কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যে ধান কাটা হয়েছে তা বিশ্লেষণ করলে প্রতি হেক্টরে এবার গড়ে চাল পাওয়া যাবে ৩ দশমিক ৫৬ মেট্রিক টন করে। গতবার অর্থাৎ ২০২২-২৩ এ যা ছিল ৩ দশমিক ৫১ মেট্রিক টন। তার আগের দুই বছরের গড় উৎপাদন ছিল যথাক্রমে ৩ দশমিক ৩৮ ও ৩ দশমিক ৩৫ টন।
হায়াত মাহমুদ বলেন, গত বছরের চেয়ে হেক্টরপ্রতি এবার চালের উৎপাদন বাড়ছে দশমিক ০৫ টন, অর্থাৎ ৫০ কেজি।
তিনি বলেন, এই হিসাবে এবার কুষ্টিয়া জেলায় চাল উৎপাদন হবে ৩ লাখ ১৬ হাজার ৫শ ৫২ মেট্রিক টন। তিনি আরো বলেন, এই হিসাবে ধানের উৎপাদন হবে ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৮শ ২৭ মেট্রিকটন। গত বছরে ধানের উৎপাদন ছিল ৪ লাখ ৬৮ হাজা ৭শ ৬৯ টন আর চালের উৎপাদন ছিল ৩ লাখ ১২ হাজার ৫শ ১৩ টন।
এভাবে ধান চালের উৎপাদন বৃদ্ধির ঘটনা একদিকে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, অন্যদিকে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রেজারার অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া। তিনি বলেন, এজন্য কৃষকদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে হবে, সরকারিভাবে কম সুদে ঋণ দিতে হবে।