আবহাওয়াসর্বশেষ

দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় ৯.৪ ডিগ্রি

tetuliya-pickynews24

আজ ১লা পৌষ। পৌষ এবং মাঘ পঞ্চগড়ের শীতের রাজ্যে মহা দূর্ভোগের এই দু’মাস। মৃদু মাঝারী এবং তীব্র শৈত্য প্রবাহের আবর্তে ১ অংকের তাপমাত্রা নিয়ে শীত স্থায়ী আস্থানা তৈরী করে সীমান্ত এই জনপদে। ঘন কুয়াশা, বৃষ্টির মত তুষারপাত সঙ্গে পাহাড় থেকে নেমে আসা হিম বাতাস পঞ্চগড়ের সীমান্ত জনপদের মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রাকে দূর্বিসহ করে তোলে।

শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রির ঘরে বিরাজ করছে। সকাল ৭টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে তাপমাত্রা রের্কড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রথম পৌষেই মাঝারি শৈত্য প্রবাহের প্রভাব জনজীবনে পড়েছে। ইতোমধ্যে হিমালয় থেকে ধেয়ে আসতে শুরু করেছে ঠান্ডাবাতাস। সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সূর্যের হালকা উষ্ণতা থাকছে। তারপর হিমালয় থেকে বাতাস বৈইতে শুরু হলে সন্ধ্যা হতেই হাটবাজারসহ রাস্তাঘাট হয়ে পড়ছে জনশুন্য। মানুষজন হয়ে পড়ছে ঘরমুখী। বিশেষ করে এই অঞ্চলের সমতলের চা বাগানের চা শ্রমিকসহ নদী কেন্দ্রিক পাথর শ্রমিকরা নদীর ঠান্ডা জলে নামতে না পেরে তাদের জীবন জীবিকায় টান পড়েছে। জীবিকার তাগিদে নদী পাড়ে বসে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে অবশেষে নদীর ঠান্ডা পানিতে নেমে পাথর সংগ্রহ করছে। জীবন জীবিকার স্বার্থে শীতবস্ত্রের সঙ্গে শীতার্ত মানুষের মাঝে সরকারি খাদ্য সহায়তা জরুরি হয়ে পড়েছে।

পঞ্চগড় স্টেডিয়ামের সামনে শীতের পিঠা বিক্রি করে অসুস্থ্য স্বামী এবং সন্তানদের চালান কমলা বেগম। তিনি বলেন, খোলা আকাশের নীচে মাথায় পলিথিনে ছাউনি দেয়ে তৈরী তার পিঠার দোকানে প্রতিদিন বিক্রি হয় ১ থেকে দেড় হাজার টাকা। প্রথম প্রথম ভালো বিক্রি হলেও শীত বাড়তে থাকায় বেচা কেনা বর্তমানে কমতে শুরু করেছে। শহরতলীর হাফিজাবাদ ইউনিয়নের সহরত আলী, মজিবর রহমান, আহাম্মদ নগর গ্রামের আবু তাহের সুফিয়ান এরা সবাই অটো রিক্সা চালিয়ে সংসার চালায়। শহরের বিভিন্ন স্থানে তাদের সঙ্গে কথা হয়, তীব্র শীতে যাত্রী কমে যাওয়ায় আয় কমে গেছে, কোন কোন দিন নিজের ঘর থেকে মালিকের জমা প্রদান করতে হয়। আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত এমন অবস্থা থাকবে বলে তারা জানায়।

প্রথম পৌষেই পঞ্চগড়ে শীতের প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। দিন দিন তাপমাত্রা আরও কমে আসছে। ডিসেম্বরের শুরু থেকে এই জেলায় তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি থেকে ১৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসে উঠানামা করছে। পৌষের প্রথম দিনেই তাপমাত্র নেমেছে এক অংকের ঘরে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে সারা পৌষে এবং মাঘে তাপমাত্রা আরো কমতে শুরু করবে। ৬ ডিগ্রীর নিচে গড়িয়ে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ সৃষ্টি করবে এবং টানা জানুয়ারি পর্যন্ত তীব্র শীতের প্রকোপ থাকবে।

গত দু’সপ্তাহ ধরে এ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে। দিনের বেলা সূর্য উঠলেও রৌদ্রের তেজ তেমন থাকে না। বিকেল গড়াতেই গ্রাম গঞ্জের হাট বাজারগুলো জনশুন্য হয়ে পড়ছে, মানুষ ঘরমুখী হয়ে পড়ছে। হিমালয়ের অবস্থান খুব কাছে হবার কারণে সন্ধ্যা হতেই পাহাড়ি হিমেল হাওয়া আছড়ে পড়ছে সীমান্তের এই জনপদে। ফলে জনজীবনে দূর্ভোগ বাড়তেই আছে।

বিশেষ করে চা ও পাথর শ্রমিকরা পড়ছে বিপাকে। এই সময়টিতে নিম্ন আয়ের মানুষদের শীত নিবারণে সীমাহীন কষ্ট করতে হয়। কর্মজীবি মানুষরা হয়ে পড়ে কর্মহীন। অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে উষ্ণতা নেন। এছাড়া শীতের প্রকোপ বাড়তে শুরু করায় জেলার হাসপাতালগুলোতে দিন দিন শীতজনিত রোগে শিশু এবং বয়স্ক মানুষ আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ জানিয়েছে টানা তীব্র শীতে গবাদি পশুর নানা রোগ বালাই দেখা দিয়েছে। গরু ছাগলের সর্দি, ডাইরিয়াসহ খুরা রোগ দেখা দিয়েছে। এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দরিদ্র শীতার্তদের জন্য সামান্য পরিসরে শীতবস্ত্র পঞ্চগড়ের পাঁচটি উপজেলার বিতরন করা হয়েছে। নতুন করে শীতবস্ত্র বরাদ্দের জন্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মন্ত্রনালয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে।

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি এই দুই মাস পঞ্চগড়ের মানুষের জীবনে নেমে আসে অবর্ননীয় দূর্ভোগ। তীব্র শীতে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষদের সহায়তার বিষয়টি কঠিন হয়ে পড়ে। আগামী দু’মাস এসব শীতার্ত মানুষের পাশে দাড়াতে সরকারিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। অসহায় দুস্থ্য মানুষদের খ্যাদ্য সহায়তাসহ শীত মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা রোকন উদ্দিন জানিয়েছে, বর্তমানে তেঁতুলিয়ায় গত দু’সপ্তাহ ধরে ১১ থেকে ১৩ ডিগ্রিতে তাপমাত্রা উঠানামা করছে। বুধবার তাপমাত্রা নেমে গেছে ১১ ডিগ্রীর ঘরে। পৌষ পড়লেই এটি আরো নিচে নেমে আসবে। জানুয়ারী মাসের পুরো সময় জুড়ে মাঝারি শৈত প্রবাহের আশংকা রয়েছে সেই ক্ষেত্রে তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রীর নিচে নেমে আসতে পারে।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মেডিসিন এবং হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. মাহবুব আলম জানান, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বয়স্ক এবং শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে নানা শীতজনিত রোগে। প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে অনেক শিশু। হাসপাতালে জায়গার অভাবে শিশুরা মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে। অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে শিশু এবং বয়স্কদের নিবিড় পরিচর্যার মধ্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

Related posts

ব্রিটিশ পপ তারকা এড শিরানের সাক্ষাৎ শাহরুখের সঙ্গে

Asma Akter

ফের শীর্ষে মোস্তাফিজ, বড় জয় পেল চেন্নাই

Mehedi Hasan

আসামে অনুমতি ছাড়া সরকারি চাকরীজীবীরা দ্বিতীয় বিয়ে করতে পরেবেন না

Samar Khan

Leave a Comment