ঘুম মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। ঘুম আমাদের প্রতিদিনের চলাফেরায় অনেক প্রভাব ফেলে। ঘুম ভালো হলে যেমন আমাদের চলাফেরায় আসে স্বচ্ছতা, তেমনি অপূর্ণ ঘুমের কারণে আমাদের চলাফেরায় অনেক ব্যাঘাত ঘটে। বিছানায় ওলটপালট করছেন অথচ ঘুম আসছে না? ঘুমানোর চেয়ে বেশি সময় নষ্ট হচ্ছে ঘুমানোর চেষ্টায়? ফোন বন্ধ রেখেও মিলছে না কোনো সমাধান? ঘুমের এমন সমস্যা আপনার একার নয়। এ রকম সমস্যায় প্রতিদিন ভুগছেন অনেক মানুষ।
সুস্থ থাকার জন্য প্রত্যেক মানুষেরই ঘড়ি ধরে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের উজ্জীবিত করে, মাথা ঠাণ্ডা রাখে, হরমোন নিয়ন্ত্রণে রাখে ও এতে শরীরের বাড়তি ওজনও কমিয়ে দেয়।
ঘুমানোর জায়গা ভালো না হওয়া, শরীরের অসুবিধাজনক অবস্থান, দুশ্চিন্তাসহ ঠিক সময়ে ঘুম না আসার অনেক কারণ রয়েছে। অনেক সময় নিছক ঘুমানোর চেষ্টার কারণেও ঘুম আসতে দেরি হতে পারে!
ঘুমের এই সমস্যার সমাধান কী? কীভাবে আমরা দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে পারি?
অনেক সমাধানের পাশাপাশি দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার কিছু বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির কথা জানানো হয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে।
সামরিক পদ্ধতি:
দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করেন যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা। প্রথমে মুখের পেশীগুলোকে শিথিল করে নিন। ঘাড়ের পেশিকেও শিথিল করে ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন। দুই পা ও উরুকে শিথিল করে কোনো একটি সুন্দর দৃশ্যের কথা ভাবুন। কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনি দেখবেন, ঘুমিয়ে পড়েছেন!
যত বেশি সময় ধরে এটি অনুশীলন করবেন, তত দ্রুত আপনি ঘুমিয়ে পড়তে পারবেন।
৪-৭-৮ পদ্ধতি:
জিহ্বাকে মুখের তালুতে ঠেকান। ঠোঁট বন্ধ রেখে জিহ্বা একইরকম রাখুন। এখন ধীরে ধীরে ঠোঁট খুলুন এবং মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন। আবার শ্বাস নিয়ে ঠোঁট বন্ধ করুন। এক থেকে চার পর্যন্ত গুনে সাত সেকেন্ড শ্বাস বন্ধ রাখুন। এবার আট সেকেন্ড ধরে শ্বাস ছাড়ুন।
অন্তত চারবার এই ৪-৭-৮ পদ্ধতিটি অনুশীলনে আপনার পুরো শরীর শিথিল হয়ে আসবে এবং আপনি ঘুমিয়ে পড়বেন। তবে যাদের শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা আছে তারা অবশ্যই পদ্ধতিটি অনুসরণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
প্রোগ্রেসিভ মাসল রিল্যাক্সাসেশন (পিএমআর) :
নিদ্রাহীনতায় ভোগা মানুষদের জন্য এটি খুবই কার্যকর পদ্ধতি। প্রথমে আপনার চোখের ভ্রূ অন্তত পাঁচ সেকেন্ডের জন্য ওপরের দিকে তুলে রাখুন। এর ফলে কপালে কিছুটা চাপ পড়বে। ভ্রূ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে দশ সেকেন্ড অপেক্ষা করুন। এবার দুইগাল চওড়া করে হাসার ভান করুন। কয়েক সেকেন্ড পরে মুখ স্বাভাবিক অবস্থায় আনুন। একটু পরে শরীরের বিভিন্ন অংশ শিথিল করুন। এর ফলে আপনার সমস্ত দুশ্চিন্তা দূর হবে এবং দ্রুত ঘুমিয়ে পড়বেন।
প্যারাডক্সিক্যাল ইনটেনশন:
আপনি যদি প্রায়ই নিদ্রাহীনতায় ভোগেন তাহলে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার জন্য এটি ভালো উপায়। এতে শিথিল হওয়ার বদলে শরীরকে জেগে থাকতে বলা হয়। এর ফলে শরীর দ্রুতই নিজেকে ক্লান্ত মনে করে ও ঘুমিয়ে পড়তে চায়। এই পদ্ধতি খুব একটা প্রচলিত না হলেও অন্য যেকোনো উপায়ের চেয়ে দ্রুত কাজ করে।
এই কৌশলগুলো ছাড়াও দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা জরুরি। পুষ্টিকর খাবারও এক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা রাখে। ঘুমাতে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে ক্যাফেইন বা উত্তেজক পানীয় পরিহার করতে হবে। রাতে হালকা খাবার পাকস্থলীকে চাপমুক্ত রাখে। এটি ভালো ঘুমে সাহায্য করে।