বাংলাদেশেসর্বশেষ

চীন থেকে আসছে বিদেশি ঋণের ১০ শতাংশ

চীন থেকে আসছে বিদেশি ঋণের ১০ শতাংশ

বাংলাদেশ এখন চীনের কাছ থেকে ঋণ নিতে বেশি আগ্রহী। বদৌলতে দেশে চীনা ঋণের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। গত কয়েক বছর ঋণদাতা দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার তালিকায় চীন শীর্ষ পাঁচে উঠে এসেছে। বাংলাদেশকে ঋণ দেয় এমন ৩২টি দেশ ও সংস্থার মধ্যে চীন চতুর্থ অবস্থানে উঠে এসেছে। চীনের ওপরে আছে জাপান, বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাংলাদেশ প্রতিবছর মোট যে ঋণ পায়, তার প্রায় ১০ শতাংশ দেয় চীন।

এদিকে বার্ষিক ঋণছাড়ে পরপর দুই বছর বিলিয়ন ডলার ক্লাবে রয়েছে চীন। অর্থাৎ দেশটি টানা দুই বছর ১০০ কোটি মার্কিন ডলার বা তার চেয়ে বেশি পরিমাণে ঋণ দিয়েছে। এই বিলিয়ন ডলার ক্লাবে থাকা অন্য দেশ ও সংস্থাগুলো হচ্ছে জাপান, বিশ্বব্যাংক ও এডিবি।

২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের বাংলাদেশ সফরের পর থেকেই এদেশে তাদের ঋণ দেওয়ার পরিমাণ বাড়তে থাকে। সর্বশেষ চার অর্থবছরে দেশটি প্রায় ৩০০ কোটি ডলার ছাড় করেছে, যা তাদের দেওয়া মোট ঋণের ৪০ শতাংশের মতো। এদিকে চীনা ঋণের গতি বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি ধীরে ধীরে পরিশোধের চাপও বাড়ছে।

চীনা ঋণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রেও বিশেষ ভূমিকা রাখছে বলে মনে করা হয়। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশেও এখন চীনা ঋণের আধিপত্য চলছে। শ্রীলঙ্কাও বন্দর ও সড়কসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে ব্যাপকভাবে চীনা ঋণ নিয়েছে। সেই ঋণ শ্রীলঙ্কাকে অবশ্য বড় ধরনের চাপে ফেলে দিয়েছে।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর  বলেন, চীনের ঋণ ডলারে পরিশোধ করতে হচ্ছে। এখন ডলারের বিপরীতে সব মুদ্রা দুর্বল, যা ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাপানের কাছ থেকে ঋণ নিলে ঋণ পরিশোধে অনেক বেশি সময় পাওয়া যায়। অন্যদিকে চীনা ঋণ পরিশোধের সময়সীমা অনেক কম। ফলে এটি ঋণ পরিশোধে চাপ সৃষ্টি করছে।

চীনা প্রকল্পে অবশ্য ভালো দিক রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, রাজনৈতিক শর্ত ছাড়া ঋণ মেলে। শুধু চীনের বাণিজ্য কৌশলের সঙ্গে মিললেই হলো।

চার বছরে ছাড় বেড়ে দ্বিগুণ

বাংলাদেশে বেশ দ্রুতগতিতে চীনা ঋণের হিস্যা বাড়ছে। গত চার বছরে ঋণছাড় বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, কোভিড শুরু হওয়ার বছরে, অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় ৬০ কোটি ডলার ছাড় করেছিল চীন। কোভিডের কারণে পরের অর্থবছরে ঋণছাড় কমে ২৪ কোটি ডলারে নেমে যায়।

তবে গত দুই অর্থবছর ধরে ঋণের অর্থছাড়ে বিলিয়ন ডলার ক্লাবে রয়েছে চীন। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ১০০ কোটি ৪০ লাখ ডলার ছাড় করে দেশটি, যা গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) আরও বেড়ে যায়। এই অর্থবছরে চীনা ঋণছাড়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১২ কোটি ৬৮ লাখ ডলার।

এভাবে ঋণের অর্থছাড়ে চীন ক্রমে শক্তিশালী অবস্থানে চলে যাচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় ঋণের ভিত্তিতে জাপানের পরেই এখন চীনের অবস্থান।

গত অর্থবছরে শীর্ষ পাঁচ দেশ ও সংস্থার মধ্যে চীনের অবস্থান ছিল চতুর্থ। এই অর্থবছরে ১৯৩ কোটি ডলার দিয়ে শীর্ষস্থানে রয়েছে বিশ্বব্যাংক। এ ছাড়া জাপান ১৯০ কোটি ও এডিবি ১৫৬ কোটি ডলার দিয়েছে। গত অর্থবছরে সব মিলিয়ে বাংলাদেশকে ৯২৬ কোটি ডলার দিয়েছে বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশ।

এ বিষয়ে ইআরডির এশীয় শাখার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা  বলেন, ‘চীনের মতো এত সস্তায় এখন ঋণ পাওয়া মুশকিল। প্রতিবছর বাংলাদেশের ১ হাজার কোটি ডলারের বিদেশি ঋণ প্রয়োজন হয়। বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাপানের মতো দাতাদের কাছ থেকে বছরে ৫০০ থেকে ৫৫০ কোটি ডলার পাওয়া যায়। বাকি অর্থ আমরা কোথায় পাব? তাই বিকল্প উৎস হিসেবে চীন ও ভারতের মতো দ্বিপক্ষীয় উৎস থেকে ঋণ নিচ্ছি। কারণ, আমাদের উন্নয়ন থামিয়ে রাখা যাবে না।’

চার বছরেই এসেছে ৪০% ঋণ

বাংলাদেশকে ১৯৭৫ সালে প্রথমবারের মতো ঋণ দেয় চীন। এরপর দীর্ঘ কয়েক দশক চীন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আর ঋণ দেয়নি। ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সফরকালে বাংলাদেশকে বড় ধরনের ঋণ সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা আসে। তখন ২৭টি প্রকল্পে প্রায় ২ হাজার কোটি বা ২০ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি দেয় দেশটি। চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশে সেই সফরের পর থেকেই ঋণের গতি বাড়ে। একের পর এক প্রকল্পও নেওয়া শুরু হয়।

গত পাঁচ দশকে চীন সব মিলিয়ে যত ঋণ দিয়েছে, তার মধ্যে গত চার অর্থবছরেই এসেছে প্রায় ২৯৭ কোটি ডলার বা ৪০ শতাংশ। ইআরডির সর্বশেষ হিসাবে ১৯৭৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে ৭০০ কোটি ডলার ছাড় করেছে চীন। দ্রুত ঋণছাড়ের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় সার্বিকভাবে বাংলাদেশের শীর্ষ ঋণদাতাদের মধ্যে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে চীন। আর বাংলাদেশের ঋণের যত দায় আছে, তার ৮ শতাংশই এখন চীনের কাছে।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, চীনা ঋণে নেওয়া ২৭ প্রকল্পের মধ্যে বর্তমানে আটটির জন্য প্রায় সাড়ে ৭০০ কোটি ডলারের মতো চুক্তি হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রেল ও সড়কসহ চীনা ঋণে ১৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব প্রকল্পে ঋণের পরিমাণ এক হাজার কোটি ডলারের মতো।

Related posts

ভিয়েতনামে ২০ বছরে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে

Rubaiya Tasnim

ওয়ালটনের নতুন সিরিজের স্মার্টফোন ‘নেক্সজি এন৮’ বাজারে

Suborna Islam

নেত্রকোণায় পানির নিচে মিলল শিশুর মরদেহ

Suborna Islam

Leave a Comment