প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামীর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয়ে দেশবাসীর কাছে তাঁর দলের নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকায়’ ভোট চেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ মানে স্মার্ট সরকার, স্মার্ট জনগণ, স্মার্ট ইকোনমি এবং স্মার্ট সোসাইটি। এর মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে একটি আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব, যা, টেকসই অর্থনীতি, মেধাভিত্তিক শিক্ষা, উন্নত সমাজ, ন্যায়পরায়ণ বাংলাদেশ, স্বচ্ছ বাংলাদেশ হবে।’
প্রধানমন্ত্রী গতবাল বিকালে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন।
আর এর মাধ্যমে আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তাঁর দলের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আমরা যাদের নৌকা মার্কার প্রার্থী দিয়েছি তাদেরকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। আপনাদের কাছে সেটাই আমার আহ্বান।’
‘আপনারা কি নৌকার প্রার্থীদের ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন?’ প্রধানমন্ত্রী সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে এ প্রশ্ন রাখলে উপস্থিত জনতা সমস্বরে দুই হাত তুলে তাতে সম্মতি জানায়।
ঐতিহ্য মেনে এখানকার হযরত শাহজালাল (র:) ও হযরত শাহ পরান (র:) এর মাজার জিয়ারতের শেষে সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন শেখ হাসিনা।
জিয়ারতকালে বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন এবং সমাবেশের মঞ্চেও উপস্থিত ছিলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার ফলে জনগণ সুফল পাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সোনার বাংলা গড়ে তোলা এবং সেই লক্ষ্যেই আমি নিরলস কাজ করছি।’
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, তাঁর হারানোর কিছু নেই, কারণ তিনি বাবা, মা, ভাইসহ পরিবারের আপনজন সবাইকে হারিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আর আমার একমাত্র ছোট বোন। সবকিছু হারিয়ে এবং আমার ছোট বাচ্চাদের তাদের মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত করে, আমি ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসেছি শুধু আমার বাবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণ করতে।’
গত ১৫ বছরে তাঁর সরকারের বাস্তবায়িত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প তুলে ধরে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসলে সিলেটে মেট্রোরেল চালুর সম্ভাব্যতা যাচাই করবে, বন্যা রোধে নদীর তীর উন্নয়ন, ঢাকা-সিলেট রুটে ডাবল ট্র্যাক রেললাইন বসানো, সিলেটের প্রবেশদ্বার খ্যাত ক্কীন ব্রিজের পাশে আরেকটি ব্রিজ নির্মাণ, কুশিয়ারা, মনু ও অন্যান্য নদীতে ড্রেজিং পরিচালনার পাশাপাশি এখন ৫০ বছর পর সুরমা নদীর ড্রেজিং করা হচ্ছে এবং সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ নৌকায় ভোট দিলে এবং আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পারলে, সমগ্র বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী করে তুলব। আর কোন মানুষ গৃহহীন, ঠিকানাবিহীন এবং ভূমিহীন হবে না। এটাই আমাদের উদ্দেশ্য। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে।’
বাংলাদেশ ইতিমধ্যে একটি উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি বাস্তবায়নের জন্য তার সরকারের প্রয়োজন।
সিলেটে এখন ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষ নেই উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি প্রতিটি গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে বাড়ি দিতে পেরেছি। তাদের চিকিৎসার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক দিয়েছি। অর্থাৎ আমরা মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করছি। যা বাকি আছে তাও করব ইনশাআল্লাহ।’
ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে জনসভা মঞ্চে আসেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা। সভা মঞ্চে এসে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে জাতীয় পতাকা নেড়ে শুভেচ্ছা জানান শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। জনগণও শ্লোগানে শ্লোগানে চারদিক মুখরিত করে ব্যানার, ফেস্টুন ও পতাকা নেড়ে প্রতিউত্তর দেয়।
এরপর আঞ্চলিক ভাষায় গান গেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহনাকে স্বাগত জানায় সিলেটবাসী।