২০২৩-এর ৭ অক্টোবরের ইজরায়েলে হামলা চালানোর সময় অন্যান্য শতাধিক ব্যক্তির সঙ্গে হামাস গোষ্ঠী পণবন্দি করেছিল ২১ বছরের ফরাসি ট্যাটু শিল্পী, মিয়া স্কিমকে। নভেম্বরে, তাঁকে মুক্তি দেয় হামাস। সেই সময় অল্প কয়েকদিনের জন্য যুদ্ধবিরতি জারি হয়েছিল। দুই পক্ষই বেশ কয়েকজন বন্দিকে মুক্তি দিয়েছিল। মুক্তির সময়, মিয়া বলেছিলেন, গাজায় তাঁর সঙ্গে অত্যন্ত ভাল ব্যবহার করেছে হামাস যোদ্ধারা।
পরে অবশ্য ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছেন তিনি। দাবি করেছেন, মুক্তির সময় তাঁকে চাপ দিয়ে ওই কথা বলতে বাধ্য করেছিল হামাস সদস্যরা। তিনি বলেছিলেন, “ওরা আমার মুখের সামনে ক্যামেরা ধরে বলেছিল, বলুন, আমরা আপনার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেছি। গাজার বাসিন্দারা খুব ভাল। আমি আর কী বা করতে পারতাম?” এবার, তাঁর বন্দি সময় নিয়ে আরও তথ্য জানালেন মিয়া। তাঁর দাবি শুধুমাত্র একটি কারণেই তাঁকে বন্দি অবস্থায় ধর্ষণ করেনি হামাস সদস্যরা।
সম্প্রতি, হামাসের হাতে তাঁর বন্দি দশা নিয়ে ইজরায়েলি টিভিতে একটি সাক্ষাত্কার দিয়েছেন এই ফরাসী ট্যাটু শিল্পী। তিনি জানিয়েছেন, মোট ৫৪ দিন গাজার বন্দি ছিলেন তিনি। বন্দি অবস্থায় বেশিরভাগ সময়ই তাঁকে একটি অন্ধকার ঘরে বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। কথা বলার অনুমতি ছিল না। কিছু দেখা, শোনা – কিছুরই অনুমতি ছিল না। এক প্রকার বাইরের জগত থেকে তাঁকে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। অনেক সময়ই তাঁকে ক্ষুধার্ত অবস্থায় কাটাতে হয়েছে, খেতে দেওয়া হয়নি। অপহরণকারী হামাস সদস্য এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরাও তাঁকে নিয়মিত গালিগালাজ করতেন। প্রতি মুহূর্তে ‘ধর্ষণের ভয় ছিল, মৃত্যুর ভয় ছিল।’
কিন্তু, কেন তাঁকে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ধর্ষণ করেনি তার অপহরণকারী? মিয়ার দাবি, তাঁকে ধর্ষণ না করার একমাত্র কারণ, তাঁকে যে ঘরে বন্দি রাখা হয়েছিল, তার দরজার বাইরেই থাকত অপহরণকারীর স্ত্রী। স্ত্রীয়ের জন্য়ই ওই হামাস সদস্য তাঁকে ধর্ষণ করেনি। মিয়া বলেছেন, “বাচ্চাদের নিয়ে তার স্ত্রী ঘরের বাইরেই থাকত। এটাই আমাকে ধর্ষণ না করার একমাত্র কারণ। তার (অপহরণকারী) আর আমার একই ঘরে থাকাকে ঘৃণা করত তার স্ত্রী।” কিন্তু, তাই বলে হামাস সদস্যের স্ত্রী, মিয়ার প্রতি সদয় ছিল এটা ভাবা ভুল হবে। তিনি বলেছেন, “আমি মনে মনে তাকে আলিঙ্গন করতে চাইতাম। মহিলা হয়ে আরেক মহিলার সামনে ভেঙে পড়তে চাইতাম। কিন্তু সে মোটেই সুবিধার মহিলা নয়। একরাশ ঘৃণা নিয়ে সে আমায় দেখত।”
তাঁর বন্দি দশাকে মিয়া হলোকাস্ট, অর্থাৎ, ইহুদি নিধনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “গাজায় বাসিন্দাদের প্রকৃতি সম্পর্কে সত্যিটা জানা দরকার। এটা ফাঁস করা আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই আমি এই বিষয়ে মুখ খুলেছি। গাজাবাসীদের প্রকৃত চরিত্র জনগণের জানা দরকার। আমি সেখানে বন্দি অবস্থায় কী অনুভব করেছি, তা জানা দরকার। গাজার সকলেই সন্ত্রাসবাদী বলে দাবি করেছেন তিনি। এমনকি, শিশু বা মহিলারাও তার ব্যতিক্রম নয়। মিয়া স্কিম বলেছেন, “সেখানে সবাই জঙ্গি। নিরীহ অসামরিক লোক বলে কেউ নেই। একজনও নেই। সেখানকার সব পরিবারই হামাসের হাতের পুতুল। এমনকি, শিশুদেরও জন্মের মুহূর্ত থেকেই শেখানো হয়, পুরো ইজরায়েলই প্যালেস্তাইনের এলাকা। ইহুদিদের ঘৃণা করতে শেখানো হয়।”
মিয়া আরও জানিয়েছেন, হামাস সদস্যরা মিথ্যা বলে তাঁর মুক্তির আশাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। হামাস সদস্যরা তাঁকে বলত, গিলাড শালিটের মতো তাঁকেও দীর্ঘদিন বন্দি থাকতে হবে। গিলাড শালিট হলেন ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক সৈনিক। ২০০৬ সালে তাঁকে বন্দি করেছিল হামাস। পাঁচ বছর পর, ২০১১ সালে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।