তথ্যপ্রযুক্তিসর্বশেষ

বিশ্ব অর্থনীতি নির্ভর করে যে কোডে!

cobol-pickynews24

বিশ্বে প্রতিদিন ৩ লাখ কোটি ডলারের লেনদেন হয় প্রায় ৬৪ বছরের পুরোনো প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজে তৈরি অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে। প্রাচীন এ প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ বর্তমানে হাতে গোনা কয়েকজনেরই জানা আছে। কোবল (কমন বিজনেস ওরিয়েন্টেড ল্যাঙ্গুয়েজ) নামের এ প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজটি কয়েক দশক আগেই বেশির ভাগ স্কুল কলেজের পাঠ্যক্রম থেকে বাদ পড়েছে।

ব্যাংকিং, অটোমোটিভ, ইনস্যুরেন্স, সরকারি, স্বাস্থ্যসেবা ও আর্থিক সংস্থা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজটি দিয়ে তৈরি অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা হয়। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন সায়েন্স, কমিউনিকেশন অ্যান্ড টেকনোলজির (আইজেএআরএসসিটি) তথ্য অনুসারে, ব্যাংকের ৪৩ শতাংশ কার্যক্রমেই কোবল ব্যবহার করা হয় এবং এর মাধ্যমেই দৈনিক ৩ লাখ কোটি ডলার লেনদেন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ৯৫ শতাংশ এটিএম কার্যক্রম ও ব্যক্তিগত ক্রেডিট কার্ড লেনদেনের ৮০ শতাংশ কোবল প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে হয়।

এ ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যাটি হলো খুব কম মানুষই আজকাল কোবল শিখতে চায়। কোবলের মাধ্যমে কোডিং বেশ কষ্টসাধ্য। এর কোডিং ফরম্যাটটিও বেশ জটিল ও অনমনীয় এবং অন্যান্য প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের চেয়ে এটি কম্পাইল করতে তুলনামূলক বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়।

কোবল ল্যাঙ্গুয়েজ শেখার প্রতি অনাগ্রহের কারণে এ নিয়ে কাজ করতে পারে এমন প্রোগ্রামার খুঁজে পাওয়া এখন দুষ্কর হয়ে উঠেছে। যারা এ ল্যাঙ্গুয়েজ পারেন বেশির ভাগেরই এখন অবসরে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। তাঁদের বিকল্প হিসেবে জায়গা নেওয়ার মতো জনবলের চরম ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

বাণিজ্য ও আর্থিক খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ কোডটির ব্যবস্থাপনা ও হালনাগাদের জন্য যে দক্ষ জনবলের প্রয়োজন তা এখন আর নেই। এ সমস্যাটি এআইয়ের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব বলে মনে করছে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিনস করপোরেশন (আইবিএম)।

আইবিএম এমন এক ধরনের এআই কোড অ্যাসিস্ট্যান্ট (ওয়াটসন এক্স) তৈরি করেছে যা ব্যবহার করে পুরোনো কোবল ল্যাঙ্গুয়েজকে আধুনিক কোনো ল্যাঙ্গুয়েজের রূপ দেওয়া যায়। এতে কোডারদের বিপুল সময়ও বাঁচে। সহজ কথায় বলতে গেলে, ইংরেজি ভাষায় কোনো বর্ণনা চ্যাটজিপিটিতে প্রবেশ করানোর মতোই প্রোগ্রামাররা কোবল ল্যাঙ্গুয়েজের কোড ওয়াটসনএক্সে দিলে এটি জাভা কোডে পরিণত হয়।

তবে তা বলা যত সহজ বাস্তবায়ন ততটা সহজ নয়। আইবিএমের আইটি অটোমেশনের পণ্য ব্যবস্থাপনার ভাইস প্রেসিডেন্ট কেরি ওলসন বলেন, ‘ওয়াটসনএক্স একটি এন্ড–টু–এন্ড সমাধান। এতে অনেকগুলো ধাপ অনুসরণ করে জটিল কোড অনুবাদ করা হয়। আইবিএম ও অন্যান্য গ্রাহকেরা অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার, ডেটা প্রবাহ ও বিদ্যমান ডিপেনডেন্সিগুলো বোঝার পর আমরা গ্রাহকদের অ্যাপ্লিকেশন পুনর্গঠন করতে সাহায্য করব। এর মানে হলো, অ্যাপ্লিকেশনটিকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে ফেলা, যেন গ্রাহকেরা প্রয়োজনমতো অংশকে কোবল ল্যাঙ্গুয়েজ থেকে জাভায় রূপান্তর করতে পারেন।’

আইবিএমের আইবিএমজেড সফটওয়্যারের ভাইস প্রেসিডেন্ট স্কাইলা লুমিস বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, এটি ডেভেলপার অ্যাসিস্ট্যান্ট টুল। এটি আইয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হলেও এর ডেভেলপারের সহায়তা প্রয়োজন। অ্যাপ্লিকেশনের টুলিং ও গ্রাহকদের সেবা বেছে নিতে ডেভেলপার প্রয়োজন।’

কোডের যে অংশের রূপান্তর প্রয়োজন তা ওয়াটসনএক্স অ্যাপ্লিকেশনে প্রবেশ করাতে হবে। এআই রূপান্তরিত যে কোড দেবে তাতেও ডেভেলপারের ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন করতে হতে পারে বলে জানান লুমিস। তিনি বলেন, ‘এআই প্রয়োজনের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কাজ করে দিতে পারে। তবু এর মধ্যে কিছু পরিবর্তন করতে হতে পারে। এটি প্রোগ্রামের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে কাজ করে, ডেভেলপারের বিকল্প হিসেবে নয়।’

যদি প্রকল্পটি সফল হয়, তবে ভবিষ্যতে ওয়াটসনএক্স কোড অ্যাসিস্ট্যান্টটি বিস্তৃত ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে। তবে এখনো অনেকে এ অ্যাপ্লিকেশনটির ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না। কারণ এর আগে আইবিএমের এআই অ্যাপ্লিকেশন ওয়াটসন হেলথ মুখ থুবড়ে পড়েছে।

Related posts

জাঁকজমকপূর্ণ দুবাই এয়ারশো শুরু হয়েছে

Rubaiya Tasnim

সুযোগ দিচ্ছে নৌবাহিনী ক্যারিয়ার গড়ার, থাকতে হবে এসএসসি পাস

Asma Akter

নামাজের সময়সূচি: ১৪ অক্টোবর ২০২৩

Asma Akter

Leave a Comment