সাম্প্রতিক সময়ে বহুল আলোচিত বরগুনায় ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় অন্যতম আসামি মো. মিজানুর রহমানকে (৪০) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-২।
শনিবার (২০ জানুয়ারি) দিনগত রাতে র্যাব-২ এর সহকারী পরিচালক এএসপি শিহাব করিম এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, গত ১৫ জানুয়ারি বরগুনার বামনা থানাধীন এলাকায় সন্তানসম্ভবা এক নারীর প্রসব বেদনা উঠলে ডৌয়াতলা সুন্দরবন ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। ক্লিনিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক সবুজ কুমার দাস পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ আল্ট্রাসনো করে দ্রুত অপারেশনের পরামর্শ দেন। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক ২০ হাজার টাকা দিলে তারা অভিজ্ঞ সার্জন দিয়ে অপারেশনসহ সম্পূর্ণ চিকিৎসাসেবা দেবেন বলে ভুক্তভোগী নারীর বাবাকে জানান।
এতে প্রসূতির বাবা রাজি হয়ে ক্লিনিকে অগ্রিম ১০ হাজার টাকা জমা দিলে রাতেই ওই নারীকে ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটারে অপারেশনের জন্য নেওয়া হয় এবং ক্লিনিকের কর্তব্যরত চিকিৎসক সবুজ কুমার দাস অন্য কোনো অভিজ্ঞ সার্জন ও স্টাফ ছাড়া অদক্ষ সহকর্মীদের নিয়ে অপারেশন শুরু করেন।
র্যাব-২ এর এই কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘ সময় পার হলেও অপারেশন থিয়েটার থেকে কোনো সংবাদ না আসায় পরিবারের সন্দেহ সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে অপারেশন থিয়েটার খোলার জন্য বললেও ‘অপারেশন চলছে’ বলে কক্ষের দরজা বন্ধ রাখেন। এভাবে দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পর দরজা খোলার জন্য জোর দাবি জানালে, চিকিৎসক মেয়েটির বাচ্চাকে তার পেটের মধ্যে পুনরায় রেখে পেট বাইরে থেকে সেলাই করে কসটেপ মেরে দেন। এসময় রোগীকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে হার্টবিট বেড়ে গেছে জানিয়ে জরুরি ভিত্তিতে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিতে হবে বলে জানান।
চিকিৎসকের কথা মত ভাড়া করা অ্যাম্বুলেন্সে বরিশাল নেওয়ার পথে ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দেড় থেকে দুই ঘণ্টা আগে প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে জানান।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মেয়ের বাবা বাদী হয়ে বরগুনার বামনা থানায় আটজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে র্যাব আসামিদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।
এরই ধারাবাহিকতায় গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-২ এর একটি আভিযানিক দল আসামি মিজানুর রহমানকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতার আসামিকে বরগুনার বামনা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান এএসপি শিহাব করিম।