ইসলাম ধর্মসর্বশেষ

আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ তোমরা একে-অপরকে মন্দ নামে ডেকো না

pickynews24

পরস্পর সম্প্রীতি রক্ষা করা আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ। তাই কুরআনুল কারিমে বলা হয়েছে- ‘হে মুমিনরা! কোনো পুরুষ যেন অন্য কোনো পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারী অপর কোনো নারীকেও যেন উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। তোমরা একে-অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং তোমরা একে-অপরকে মন্দ নামে ডেকো না; ঈমানের পর মন্দনাম অতি নিকৃষ্ট। (এ থেকে) যারা তাওবাহ না করে তারাই জালিম। (সূরা হুজুরাত-১১)

উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা পরস্পরের প্রতি বিদ্রূপ করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, চাই তা পুরুষ কিংবা নারী যেই হোক না কেন। কারণ যাকে বিদ্রূপ করা হয় সে আল্লাহর দৃষ্টিতে বা মূল্যায়নে বিদ্রূপকারী বা বিদ্রূপকারিণীর চেয়ে ভালোও হয়ে যেতে পারে। এখানে পরোক্ষভাবে এ কথাই বলা হয়েছে যে, পুরুষ ও স্ত্রীলোকরা নিজেদের মধ্যে যেসব জিনিসকে শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড মনে করে থাকে, সেগুলো মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব পরিমাপ করার প্রকৃত মানদণ্ড নয়। শ্রেষ্ঠত্ব পরিমাপ করার আরো কিছু মানদণ্ড থাকতে পারে, যা হয়তো মানুষ জানে না, শুধু আল্লাহ তায়ালা জানেন এবং তা দিয়ে তাঁর বান্দাদের মূল্যায়ন করে থাকেন। কখনো ধনী পুরুষ দরিদ্র পুরুষকে, সবল পুরুষ দুর্বল পুরুষকে, সুঠাম ও সুদর্শন পুরুষ কুৎসিত পুরুষকে, মেধাবী, চতুর ও দক্ষ মানুষ অমেধাবী সাদাসিধে ও অদক্ষ মানুষকে, সন্তানধারী মানুষ নিঃসন্তান মানুষকে এবং যার পিতা-মাতা আছে সে পিতৃ-মাতৃহীনকে উপহাস করে থাকে। আবার সুন্দরী রমণী কুশ্রী রমণীকে, যুবতী বৃদ্ধাকে, সর্বাঙ্গ সুগঠিত নারী বিকলাঙ্গ নারীকে এবং ধনী নারী দরিদ্র নারীকে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে থাকে। কিন্তু এসব উপকরণ পার্থিব উপকরণ মাত্র-মানদণ্ড নয়। এসব উপকরণ ছাড়াই আল্লাহর মানদণ্ডে মূল্যায়ন ও অবমূল্যায়ন হয়ে থাকে। তবুও মানুষকে রকমারি ঘৃণ্য উপাধিতে ভূষিত করার মাধ্যমে তাকে বিদ্রূপ, উপহাস ও দোষারোপ করা হয়ে থাকে। এটি প্রত্যেক মুসলমানের ন্যায্য অধিকার যে, সে অন্য কোনো মুসলমানের পক্ষ থেকে এমন কোনো উপাধি লাভ করবে না যা সে অপছন্দ করে এবং যা দ্বারা তার ওপর কোনো কলঙ্ক আরোপ করা হয়। আর প্রত্যেক মুমিনের এটি কর্তব্য ও আদবের অন্তর্ভুক্ত যে, তার দ্বীনী ভাইকে সে এ ধরনের উপাধি দ্বারা সম্বোধন করার মাধ্যমে লাঞ্ছিত করবে না। (তাফসির ফি জিলালিল কুরআন)

অনেকসময় দেখা যায়, আমাদের সমাজের কিছু মানুষ একে-অন্যকে নাম বিকৃত করে ডাকে। যেমন একজনের নাম ‘রহমান’; কিন্তু বিকৃত করে তাকে ডাকা হয় ‘রহমাইন্না’ বলে। এতে শুধু ব্যক্তির মর্যাদাই ক্ষুণ্ন হয় এমন নয়; আল্লাহ তায়ালার নামের বিকৃতি করা হয়। কারণ রহমান মহান আল্লাহর নাম। অতএব আল্লাহর নামের বিকৃতি করা মুমিনের জন্য বড় ধরনের গুনাহ ও চরম ধৃষ্টতা। মানুষ তখনই আরেকজনের নাম বিকৃত করে যখন কোনো কারণে তার ওপর বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়। কোনো মুমিনের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা খুবই নিন্দিত বিষয়। এমনকি এটি নিঃসন্দেহে সুন্নাহপরিপন্থী ও গর্হিত কাজ। এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে ফিরে আসা অত্যন্ত জরুরি। এ প্রসঙ্গে হাদিসে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

আবু হুরায়রা রা: বলেন- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘কসম সেই সত্তার যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না মুমিন হও। আর তোমরা মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয় অবহিত করব না, যা করলে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তা হলো তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও।’ (আবু দাউদ-৫১৯৩)

কুরআনুল কারিমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষকে পরস্পর অসম্মান করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘যারা পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয় এমন কোনো অপরাধের জন্য যা তারা করেনি, সে অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা তারাই বহন করবে।’ (সূরা আহজাব-৫৮)

মুসলমানের কখনো উচিত নয় যে, তার দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা হাত অথবা মুখে হোক। কাউকে হেয় করা একটি অহঙ্কার। এটি ইবলিসি। আল্লাহ তায়ালা যখন আদম আ:-কে সৃষ্টি করেন, তখন সব ফেরেশতাকে নির্দেশ দেন, তাঁকে সিজদা করার জন্য। এমনকি তাঁকে সিজদা না করায় ইবলিসকে কঠিন শাস্তি দেন। কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদের বললেন, আমি কাদামাটি থেকে মানুষ সৃষ্টি করতে যাচ্ছি। আমি যখন তাকে সঠিকভাবে বানিয়ে ফেলব আর তার ভেতরে আমার রূহ ফুঁকে দেবো, তখন তোমরা তার সামনে সিজদায় পড়ে যাবে। ফলে ফেরেশতারা সবাই সিজদাবনত হলো- ইবলিস ছাড়া, সে অহঙ্কার করল এবং কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।’ (সূরা সোয়াদ : ৭১-৭৪)

রাসূলুল্লাহ সা:-এর হাদিসেও এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস থেকে বর্ণিত- নবী সা: বলেন, ‘যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলিমরা নিরাপদ, সে-ই প্রকৃত মুসলিম আর যে আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়গুলো পরিত্যাগ করে, সে-ই প্রকৃত হিজরতকারী?’ (বুখারি)

সমাজে এমন অনেক বিনয়ী ও নরম মনের মানুষ আছেন যারা চলতে ফিরতে মানুষের কাছে দোয়া কামনা করেন। আবার কেউ আছে তা থেকে বিমুখ থাকেন। সে ক্ষেত্রে আমাদের উচিত পরস্পরে দোয়া করা।

Related posts

যারা নতুন কনে তাদের জন্যই রইলো কিছু সহজ টিপস

Asma Akter

কনের উপস্থিত থাকা কি জরুরি,বিয়ের মজলিসে?

Asma Akter

ঢাকাইয়া কুট্টি কারা, কুট্টি ভাষার উদ্ভব কীভাবে হলো?

Megh Bristy

Leave a Comment