রমজান ও ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে ওঠে জাল টাকার ব্যবসায়ীরা। এজন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুককে বেছে নেয় চক্রটি। বুস্টিং করে বিজ্ঞাপন দিয়ে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা সংগ্রহ করে। তাদের কাছে বাংলাদেশি টাকা ছাড়াও মালয়েশিয়া, ওমান ও সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের জাল নোট পাওয়া যায়।
এমনই একটি জাল নোট তৈরি চক্রের মূলহোতা পারভেজ হোসাইনসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। বৃহস্পতিবার ভোরে রাজধানীর রূপনগর থানার ইস্টার্ন হাউজিং এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
তারা হলেন মো. পারভেজ হোসেন (২৪), মো. রুবেল ইসলাম ওরফে হৃদয় (১৯), নুর আলম ওরফে সাগর (২৩) ও মো. মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে মোস্তাকিম (২২)।
এসময় তাদের কাছ থেকে ২ লাখ ৪৯ হাজার টাকা মূল্যমানের জালনোট, যার মধ্যে ২০০ টাকার জাল নোট ১ হাজার ২৪০টি এবং ১ হাজার টাকার জাল নোট একটি, মালয়েশিয়ার ৫০ রিঙ্গিত মূল্যমানের জাল নোট ৪০টি, ওমানের ৫০ রিয়াল মূল্যমানের জাল নোট ৪২টি, সৌদি আরবের ২০ রিয়াল মূল্যমানের জাল নোট ২৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ২০ দিরহাম মূল্যমানের জাল নোট ৪২টি, জাল নোট তৈরিতে ব্যবহৃত প্রিন্টার, ল্যাপটপ, ৫০ পাতা সাদা কাগজ, কেমিকেলসহ ৪টি মোবাইল এবং নগদ ১ হাজার ১২০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় র্যাব-১ এর প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোসতাক আহমেদ।
তিনি বলেন, সম্প্রতি জাল টাকা তৈরির সঙ্গে বেশ কয়েকটি চক্র জড়িত বলে র্যাবের গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়। সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে অধিক মুনাফার লোভে জাল টাকা তৈরি ও বাজারজাত করার সংঘবদ্ধ কিছু চক্র সক্রিয় হয়ে পড়ছে। এই চক্রগুলো জাল টাকা তৈরি করে নির্দিষ্ট কয়েকজন সদস্য দিয়ে আসল টাকার ভেতর জাল টাকা মিলিয়ে মানুষকে নিঃস্ব করে দিচ্ছে।
গ্রেফতারদের কাজের ধরন জানিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোসতাক আহমেদ বলেন, গ্রেফতার পারভেজ জাল নোট ছাপানো চক্রের মূলহোতা। তিনি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে জাল টাকা কেনাবেচার নেটওয়ার্ক তৈরি করেন। এসব পেজ প্রমোট ও বুস্টিং করে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা সংগ্রহ করেন, যারা রমজান ও পবিত্র ঈদুল ফিতরকে টার্গেট করে জাল নোটের ব্যবসায় লিপ্ত হন। তারা প্রতি ১ লাখ টাকা মূল্যমানের জাল নোট ১৫-২০ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন। ঈদ উপলক্ষে জাল নোটের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে তারা প্রতি ১ লাখ টাকার জাল নোট ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করছিলেন।
গ্রেফতার রুবেল দেশি-বিদেশি জাল টাকা ছাপানোর মূল কারিগর। তিনি বিভিন্ন সীমান্তবর্তী জেলা থেকে টাকা ছাপানোর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং জাল টাকার ডিজাইনসহ ছাঁচ সংগ্রহ করেন। অনলাইনে চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন মূল্যমানের জাল টাকা ছাপানোর কাজ করতেন।
গ্রেফতার নুর আলম এই চক্রের কাটিং মাস্টার হিসেবে পরিচিত। তৈরি করা জাল টাকা প্রিন্টিংয়ে পর সঠিক সাইজ অনুযায়ী কাটিংয়ের কাজ করতেন। পাশাপাশি মোবাইল এবং অনলাইনে অর্ডার করা জাল টাকা বিভিন্ন জনের কাছে পৌঁছে দিতে ডেলিভারিম্যান হিসেবেও কাজ করতেন।
গ্রেফতার মো. মোস্তাফিজুর রহমান অটোরিকশা গ্যারেজের মালিক। তার রিকসা গ্যারেজকে আড়াল হিসেবে ব্যবহার করে মূলহোতা পারভেজের নেতৃত্বে জাল টাকার ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন।