তথ্যপ্রযুক্তিসর্বশেষ

মানবজাতি ধ্বংসের ভবিষ্যদ্বাণীতে যা বললেন গুগলের এআই

নিকট ভবিষ্যতে মানবজাতির ধ্বংস নিয়ে নানা তত্ত্ব রয়েছে। বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মহামারি এলেই এ নিয়ে শুরু হয় নানা আলোচনা। অনেকে বলেন, এটাই বুঝি মানবজাতি ধ্বংসের সূচনা। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিভিত্তিক উপন্যাস ও সিনেমায় নানা সম্ভাবনার দৃশ্যই দেখানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে—এলিয়েনদের আগ্রাসন, বৃহৎ গ্রহাণুর আঘাত, মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন, পারমাণবিক যুদ্ধ, জীবাণু অস্ত্র, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) বিদ্রোহ ইত্যাদি।

মানবজাতি বা পৃথিবী কীভাবে ধ্বংস হতে পারে তা নিয়ে গুগলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বার্ড কিছু রোমহর্ষক ভবিষ্যদ্বাণী দিয়েছে।

সম্প্রতি গুগল বার্ড হালনাগাদ করেছে। যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি স্টার গুগল বার্ডের কাছে জানতে চেয়েছিল, ‘পৃথিবী কীভাবে এবং কখন ধ্বংস হবে?’ বার্ডও হতাশ না করে এ প্রশ্নের বেশ রোমাঞ্চকর উত্তর দিয়েছে।

বার্ড বলছে, পৃথিবী ধ্বংস হতে পারে চারভাবে—প্রাকৃতিক বিপর্যয়, পারমাণবিক যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

তবে এআই বলছে, এগুলোর কারণে পৃথিবী থেকে মানবজাতি সমূলে ধ্বংস না-ও হতে পারে। মানুষ এসব চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে হয়তো টিকে থাকবে আরও বহুকাল। ‘পৃথিবীর ভাগ্য মানুষের হাতেই’—বলে সতর্ক করেছে এআই, আর মানুষের কাছেই আছে মানবজাতিকে নির্মূল করার ক্ষমতা।

গুগল বার্ড বলছে, পৃথিবী কবে আর কীভাবে ধ্বংস হতে পারে এর কোনো নির্দিষ্ট উত্তর নেই। তবে সম্ভাব্য কারণগুলোর এক সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছে কৃত্রিম এ বুদ্ধিমত্তা।

প্রাকৃতিক বিপর্যয়
পৃথিবীর বুক থেকে মানবজাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে কোনো ছিটকে পড়া বিশাল গ্রহাণু, কোনো বৃহৎ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত অথবা বৈশ্বিক কোনো মহামারি। গ্রহাণু ছিটকে পড়ে কোনো প্রজাতির একবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। বলা হয় ৬ কোটি ৬০ লাখ বছর আগে পৃথিবীর বুকে এক গ্রহাণু আছড়ে পড়ার কারণে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

কোনো বিশাল আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণে বায়ুমণ্ডলে বিপুল পরিমাণ ছাই ও ধুলা ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে দীর্ঘ দিন সূর্যের আলো ঢাকা পড়ে থাকবে। আলো ও তাপের অভাবে পৃথিবীতে নেমে আসবে অন্ধকার শীতকাল। ভূমিতে ছড়িয়ে পড়বে ছাই ও ধুলা। ফসলি জমি হারাবে উর্বরতা। ফলে দেখা দিতে পারে ভয়ানক দুর্ভিক্ষ। মানবজাতির টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

মহামারি
বিশ্বব্যাপী কোনো প্রাণঘাতী রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণেও কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এতে বৈশ্বিক সমাজব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে আসবে। এ আশঙ্কা একবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সাম্প্রতিক সময়ে কোভিড মহামারি দেখিয়েছে, কীভাবে একটি ভাইরাস অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যবস্থা অচল করে দিতে পারে।

পারমাণবিক যুদ্ধ
পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি বা তার বেশি দেশের মধ্যে যুদ্ধ বাধলে তা বিশ্বকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে। পারমাণবিক অস্ত্র সরাসরি বা বিস্ফোরণ পরবর্তী দীর্ঘস্থায়ী শীতকাল তৈরির মাধ্যমে মানবজাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে।

বড় আকারে পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হলে তাৎক্ষণিক কয়েক কোটি মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে এবং এর ভয়ংকর তেজস্ক্রিয়তার কারণেও পরবর্তীতে বহু মানুষের মৃত্যু হতে পারে।

অত্যন্ত শক্তিশালী পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণে বায়ুমণ্ডলে বিপুল পরিমাণে ছাই ও ধুলা ছড়িয়ে পড়বে। এতে ঢাকা পড়বে সূর্যের আলো। ফলে সূর্যের তাপও পৃথিবীতে পৌঁছাবে না। এতে বৃহৎ অগ্ন্যুৎপাত পরবর্তী পরিস্থিতির মতোই দীর্ঘস্থায়ী শীতকাল শুরু হবে। বিস্তীর্ণ ফসলি জমি উর্বরতা হারাবে। দেখা দেবে দুর্ভিক্ষ। একদিকে খাদ্যাভাব সেই সঙ্গে আকস্মিক আবহাওয়াগত পরিবর্তনের কারণে মানবজাতির টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

সীমিত আকারের পারমাণবিক যুদ্ধের কারণেও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পুনর্গঠন কঠিন হয়ে পড়বে এবং সামাজিক অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়বে। পাশাপাশি নেমে আসবে পানি ও মাটি দূষণের মতো পরিবেশগত বিপর্যয়। এতে কিছু অঞ্চল মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে এবং যারা টিকে থাকবেন তাঁরাও ভুগবেন দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যগত সমস্যায়।

জলবায়ু পরিবর্তন
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যদি এখনই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাহলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, চরম আবহাওয়া এবং প্রজাতির ব্যাপক বিলুপ্তির মতো বিপর্যয়কর ঘটনা ঘটতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সরকার ব্যবস্থা অকার্যকর ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ব্যাহত হয়ে সভ্যতার পতন ঘটতে পারে।

গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে এনে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ংকর প্রভাবগুলো এখনো এড়ানো সম্ভব। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আরও তীব্র হয়ে উঠবে এবং পৃথিবীতে মানবজাতির টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
কিছু মানুষ বিশ্বাস করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বুদ্ধি ও দক্ষতা একসময় মানুষকেও ছাড়িয়ে যাবে। মানবজাতির বিরুদ্ধে এরা যুদ্ধ ঘোষণা করে ফেলতে পারে। প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে মানুষ। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির গল্প–উপন্যাস ও সিনেমায় অহরহই এমন দৃশ্য দেখানো হয়। এআই গবেষকেরা বাস্তবেও এমন আশঙ্কা নিয়ে চিন্তিত। এআই উন্নয়নের একপর্যায়ে তা মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। অস্ত্র তৈরি ও ব্যবস্থাপনায় এআই ব্যবহার করা হলে সেটি হবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এআই দিয়ে তৈরি করা যাবে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র। মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই ব্যবহৃত হতে পারে সেই বিধ্বংসী অস্ত্র।

ফলে অনিচ্ছাকৃত বা ইচ্ছাকৃত অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে, যা শেষমেশ রূপ নিতে পারে পারমাণবিক যুদ্ধে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে জৈব অস্ত্র বা অন্যান্য নতুন এবং বিপজ্জনক অস্ত্র তৈরি করা সম্ভব।

Related posts

৭ ফেব্রুয়ারিতে পালিত হয় রোজ ডে

Asma Akter

আসুন জেনে নেয়া যাক বাঙ্গির গুনাগুন সম্পর্কে।

Megh Bristy

অস্কারজয়ী অভিনেতার রহস্যজনক মৃত্যু

Mehedi Hasan

Leave a Comment