ইরবাজ ইবনে সারিয়া (রা.) বলেন, একদিন ফজরের নামাজের পর রাসুল (সা.) আমাদেরকে অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী নসীহত করলেন। সবার চোখ অশ্রুসিক্ত হলো, হৃদয় ভীত-শঙ্কিত হলো। এক লোক বলে উঠলো, এটি বিদায়ী নসীহতের মতো শোনাচ্ছে! তাই বলুন আপনি আমাদের থেকে কী অঙ্গীকার নেবেন? রাসুল (সা.) বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি অর্জনের ওসিয়ত করছি, নেতার কথা মান্য করা ও তার আনুগত্যের নির্দেশ দিচ্ছি, যদি সে হাবশী দাসও হয়। তোমাদের মধ্যে যারা জীবিত থাকবে তারা অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাত এবং খোলাফায়ে রাশিদিনের সুন্নাত আকড়ে ধরো, মাড়ির দাঁত দিয়ে শক্ত করে কামড়ে ধরো। আর সব নবঅবিস্কৃত বিষয় থেকে বেঁচে থাকো, সব নবআবিস্কৃতি বিষয়ই বিদআত আর সব বিদআতই পথভ্রষ্টতা। (সুনানে তিরমিজি, সুনানে আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ)
এ হাদিস থেকে যে শিক্ষাগুলো আমরা পাই
১. এ হাদিস থেকে বোঝা যায় শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো নবিজির (সা.) সুন্নাত বা আদর্শ। নবুয়তপ্রাপ্তির পর থেকে নবিজিরি (সা.) প্রতিটি কথা, কাজ ও সম্মতি আমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। নবিজির (সা.) সাহাবায়ে কেরামও (রা.) আমাদের জন্য আদর্শ। তাদের কথা ও কাজও অনুসরণীয়।
২. যে হোদায়াতপ্রাপ্ত খলিফারা নবিজির (সা.) আদর্শ ও কর্মপন্থা অনুযায়ী তাদের জীবন, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন, তাদেরও রাসুল (সা.) আদর্শ ঘোষণা করেছেন। তাদের আদর্শ ও কর্মপন্থাকেও নিজের আদর্শ ও কর্মপন্থার মতো অনুসরণীয় গণ্য করেছেন। তাদেরকে ‘রাশেদিন’ ঘোষণা করেছেন। ‘রুশদ’ অর্থ ভালো ও কল্যাণের পথ। এ পথের পথিক তারাই যারা আল্লাহর এই আহ্বানে সাড়া দিয়েছে,
وَ اَنَّ هٰذَا صِرَاطِیۡ مُسۡتَقِیۡمًا فَاتَّبِعُوۡهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِکُمۡ عَنۡ سَبِیۡلِهٖ ذٰلِکُمۡ وَصّٰکُمۡ بِهٖ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ
এটিই আমার সরল পথ। তোমরা এই পথ অনুসরণ করো এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে সেগুলো তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দূরে সরিয়ে নেবে। আল্লাহ তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিচ্ছেন, যেন তোমরা সতর্ক হও। (সুরা আনআম: ১৫৩)
হাদিসের এ নির্দেশনা থেকে বোঝা যায় সালাফে সালেহ বা নেক পূর্বপুরুষদের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত, তাদের পথ ও কর্মপন্থা অনুসরণ করা উচিত।
৩. এ হাদিস থেকে বোঝা যায় শরিয়তের উৎসগুলোকে সম্মানের সাথে গ্রহণ করা এবং শক্তভাবে আঁকড়ে ধরা আমাদের কর্তব্য। রাসুল (সা.) শক্তভাবে আঁকড়ে ধরার ওপর অনেক বেশি গুরুত্বারোপ করেছেন। শেষে বলেছেন, ‘মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরো!’ তাই সব কাজে সুন্নাত অনুসরণকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এ ব্যাপারে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নাই। বিদআতের ব্যাপারে নমনীয় হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।