ইসলাম ধর্ম

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার বান্দার দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখতে চান

Pickynews24

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার বান্দার দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখতে চান, তিনি যদি ইচ্ছা করতেন তাহলে সাথে সাথেই তার বান্দাকে পাকড়াও করতে পারেন কিন্তু তিনি তা করেন না, আবার অনেক ক্ষেত্রে তিনি তা করেনও। আল্লাহপাক চান তার বান্দারা যেন নিজের ভুল বুঝতে পেরে নিজেকে পবিত্র করার চেষ্টা করে আর এজন্য তার কাছে ক্ষমা চায় আর সর্বদা ইস্তেগফারে রত থাকে।

আমাদের চলার পথে কিছু না কিছু ভুল-ত্রুটি হয়েই থাকে, তাই সব সময় আমরা যদি ইস্তেগফারে রত থাকি তাহলে আল্লাহপাক হয়তো আমাদের এ সামন্য ভুলও ক্ষমা করে দেবেন। এ বিষয়ে একটি হাদিসে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ‘ইস্তেগফার’র সাথে আঁকড়ে থাকে (অর্থাৎ ইস্তেগফারে সর্বদা নিয়োজিত থাকে) আল্লাহতাআলা তাকে সর্ব প্রকার বিপদ-আপদ থেকে উদ্ধারের পথ সৃষ্টি করে দেন আর প্রত্যেক দুরবস্থা থেকে উত্তরণের রাস্তা বের করে দেন আর তাকে ওই সব রাস্তায় রিজিক (জীবিকা) দান করেন যা সে ধারণাও করতে পারে না’ (সুনান আবি দাউদ, কিতাবুল বিতর, বাব ফিল ইস্তেগফার)।

তাই আমাদেরও উচিত হবে সর্বদা ইস্তেগফারে রত থাকা। আমরা যখন যেই অবস্থায়ই থাকি না কেন, আমরা ইচ্ছা করলেই মহান খোদাতাআলাকে স্মরণ করতে পারি। আমরা যদি আমাদের দোষ-ত্রুটিকে ক্ষমা করাতে চাই তাহলে ইস্তেগফারের বিকল্প নেই। তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, আমি ভুল করেছি, তারপর আমার মাঝে অনুশোচনা হলো আর আমি এজন্য খোদার কাছে ক্ষমা চাইলাম এবং ইস্তেগফার করলাম আর আল্লাহতায়ালাও আমাকে ক্ষমা করে দিলেন, তাই বলে বার বার ভুল করবো আর খোদার কাছে ক্ষমা চাইতে থাকবো তা ঠিক নয়। মুমিন একই ভুল বার বার করেন না।

আমাদের এমনভাবে ইস্তেগফার করতে হবে যেন আমার দ্বারা এমন ভুল দ্বিতীয়বার আর কখনও সংঘটিত না হয়। এছাড়া সর্বদা মহান খোদাতাআলার কাছে আমাদের এ প্রার্থনাই করতে হবে যেভাবে আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘রাব্বানা যালামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম-তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানা কুনান্না মিনাল খাসেরিন’ অর্থাৎ ‘হে আমাদের প্রভু-প্রতিপালক! নিশ্চয় আমরা নিজেদের প্রাণের ওপর জুলুম করেছি আর তুমি আমাদের ক্ষমা না করলে এবং আমাদের ওপর কৃপা না করলে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ২৩)।

আমরা যেন সর্বদা মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও তওবা করতে থাকি এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আবার আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘ওয়া আনেসতাগফিরু রাব্বাকুম সুম্মা তুবু ইলাইহে’ অর্থাৎ ‘তোমরা তোমাদের প্রভু-প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা চাইবে, তার কাছে সবিনয়ে তওবা করবে’ (সুরা হুদ, আয়াত: ৩)।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের তৌফিক দান করুন। এছাড়া আমরা যদি কারও প্রতি কোনো জুলুম অন্যায় করে থাকি তার জন্য আল্লাহপাকের দরবারে ক্ষমা চেয়ে নেই, কেননা তিনি ক্ষমাশীল।

তাই আমাদের সব সময় আল্লাহপাকের কাছে আমাদের পাপসমূহের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে আর তার শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে। তিনি আমাদের না চাইতেও কত কিছুই না দান করছেন। আমরা যদি এসবের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন না করি তাহলে আমরা অকৃতজ্ঞ হিসেবে পরিগণিত হবো।

একটি হাদিসে এসেছে, হজরত নুমান বিন বশীর (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবি হজরত মুহুম্মদ (সা.) মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘যে ব্যক্তি স্বল্পে তুষ্ট হয় না সে অধিক পেলেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। আর যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে না সে আল্লাহতাআলার করুণারাজিরও কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারে না। আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহরাজির উত্তম স্বীকারোক্তি প্রকাশ করাটাও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন। আর আল্লাহতাআলার আশীষ সমূহের উত্তম স্বীকারোক্তি প্রকাশ না করাটা অকৃতজ্ঞতা’ (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ২৭৮, বৈরুতে মুদ্রিত)।

অপর একটি হাদিসে হজরত মা’য়াজ বিন জিবল (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তার হাত শক্ত করে ধরলেন আর বললেন, ‘হে মা’য়াজ! আল্লাহর কসম! সত্যিই আমি তোমাকে ভালোবাসি’ অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, ‘হে মা’য়াজ! আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, তুমি প্রত্যেক নামাজের পরে এই দোয়া করতে ভুলে যেও না, ‘আল্লাহুম্মা আইন্নি আ’লা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদিকা’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে শক্তি-সামর্থ্য দান কর যেন আমি তোমার যপ-গাঁথা আবৃত্তি করতে পারি, তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি আর তোমারই ইবাদত আরো উত্তম রূপে করতে সক্ষম হই’ (সুনান আবি দাউদ, কিতাবুল বিতর, বাব ফিল ইস্তেগফার)।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের তৌফিক দান করুন। এছাড়া আমরা যদি কারও প্রতি কোনো জুলুম অন্যায় করি তার জন্য আল্লাহপাকের দরবারে ক্ষমা চেয়ে নেই, কেননা তিনি ক্ষমাশীল।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করুন। আমিন।

Related posts

ইসলামে শাবান মাস বিশেষ ফজিলত ও মর্যাদাপূর্ণ

Asma Akter

ইসলামি শরিয়তে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়

Asma Akter

আজকের নামাজের সময়সূচি: ২৭ জানুয়ারি ২০২৪

Asma Akter

Leave a Comment