ইসলাম ধর্ম

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন, তিনি তোমাদের জীবন দান করেছেন, তিনি আবার মৃত্যু দেবেন

pickynews24

রঙিন এই দুনিয়ায় আল্লাহ তায়ালার লাখো কোটি নিয়ামত ছড়িয়ে আছে। এ সব কিছুই আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন মানুষের জন্য। এগুলো ভোগ করার জন্য রয়েছে ইচ্ছা সাধ্য সামর্থ্যসহ হরেক রকমের যোগ্যতা-দক্ষতা ও ক্ষমতা। এই জগতে মানুষ যা চায় কিছু পায় কিছু হারায়। কিন্তু মানুষের চাওয়া-পাওয়ার সীমা নেই। কাক্সিক্ষত বস্তু পেয়ে কেউ আনন্দে আত্মহারা হয় আবার না পাওয়ার ব্যথায় বাড়ে কারো দীর্ঘশ্বাস। তবে একটি স্বাদ প্রত্যেককেই ভোগ করতে হয়। আহকামুল হাকিম রাব্বুল আলামিন কুরআনুল কারিমের সূরা আলে ইমরানের ১৮৫ নম্বর আয়াতে বলেছেন- ‘কুল্লু নাফসিন জা ইকাতুল মাউত’ অর্থাৎ- ‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।’ এ বড় কঠিন করুণ বাস্তবতা, যা কেউই এড়িয়ে যেতে সক্ষম নয়। দুনিয়ায় যখন এসেছি মৃত্যু হবেই একদিন; কিন্তু মৃত্যুটা কেমন হবে সেই ভাবনায় সর্বদা সকাতর মু’মিনের অন্তর।

পরোক্ত আয়াতে আরো বলা হয়েছে- ‘অতঃপর তোমাদের (জীবনভর) উপার্জনের প্রতিদান কিয়ামতের দিন আদায় করে দেয়া হবে। যাকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচিয়ে দেয়া হবে সে-ই হবে সফল ব্যক্তি। মনে রেখো, এই পার্থিব জীবন কিছু বাহ্যিক ছলনার সামগ্রী ছাড়া আর কিছু নয়।’

‘যারা মৃত্যুকে অধিক স্মরণ করে এবং মৃত্যুপরবর্তী জীবনের জন্য উত্তমরূপে প্রস্তুতি গ্রহণ করে তারাই সর্বাধিক বুদ্ধিমান।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ-৪২৫৯)

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআনুল কারিমে বলেন- ‘তিনি তোমাদের জীবন দান করেছেন অতঃপর তিনি আবার মৃত্যু দেবেন, পুনরায় তিনি তোমাদের জীবন দান করবেন, মানুষ (আসলেই) অতিমাত্রায় অকৃতজ্ঞ (তারা সব ভুলে যায়)।’ (সূরা হজ- ৬৬)
আমাদের সবার উচিত ভালো মৃত্যুর জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে তাওফিক চাওয়া; ভালো মৃত্যুর জন্য দোয়া করা, বেশি বেশি নেক আমল বাড়িয়ে দেয়া, গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর দরবারে কাকুতি-মিনতি করা, দয়া কামনা করা এবং তাওবাহ- ইস্তিগফার করা।
এক বর্ণনায় পাওয়া যায়, পাপিষ্ঠ লোকের জান কবজ করার সময় বিকট চেহারার ফেরেশতা আগমন করে। তার সাথে থাকে কষ্টদায়ক কাপড়। তারা চোখ বুজে যাওয়া পর্যন্ত তার কাছে বসে থাকে। মৃত্যুর ফেরেশতা তার মাথার কাছে বসে বলে, হে পাপিষ্ঠ আত্মা, বের হয়ে আল্লাহর ক্রোধ ও গজবের দিকে চলো। তখন তার দেহে প্রচণ্ড কম্পন শুরু হয়। তার আত্মা টেনে বের করা হয়। আর যখন আত্মা বের করা হয় তখন এক মুহূর্তের জন্যও ফেরেশতা তাকে ছেড়ে দেয় না। সেই কষ্টদায়ক কাপড় দিয়ে তাকে পেঁচিয়ে ধরে। তার মৃত্যুটা হয় অনেক কষ্টের।

দুনিয়ায় যারা নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে তাদের মৃত্যু অনেক সহজ হয়ে যায়।
বারা ইবনে আজেব রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যখন কোনো ঈমানদার বান্দা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে আখিরাতের দিকে যাত্রা করে, তখন আকাশ থেকে তার কাছে ফেরেশতা আসে। তাদের চেহারা থাকবে সূর্যের মতো উজ্জ্বল। তাদের সাথে থাকবে জান্নাতের কাফন ও সুগন্ধি। তারা তার চোখ বন্ধ করা পর্যন্ত তার কাছে বসে থাকবে এবং বলবে- হে প্রশান্ত আত্মা বের হয়ে এসো। তখন আত্মা এমনভাবে বেরিয়ে আসবে যেমন পানির পাত্র থাকে পানির ফোঁটা বেরিয়ে আসে।’

আনাস বিন মালিক রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা যদি কারো কল্যাণ চান তখন তাকে ভালো কাজের তাওফিক দান করেন।’

আম্মাজান হজরত আয়েশা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎকে ভালোবাসে আল্লাহ তায়ালাও তার সাক্ষাৎকে ভালোবাসেন।’ মু’মিনের জন্য আল্লাহর ভালোবাসা ব্যতীত বড় নিয়ামত আর কী থাকতে পারে? আল্লাহপ্রেমের মহা মূল্যবান সম্পদ যে অর্জন করে তার কাছে এ দুনিয়া তুচ্ছ বলেই মনে হওয়া স্বাভাবিক নয় কি?

রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, “যে ব্যক্তির সর্বশেষ কথা হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (আবু দাউদ-৩১১৬)
ভালো মৃত্যুর জন্য আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা একটি বড় উছিলা। আর শহীদি মৃত্যু নিঃসন্দেহে পরম শান্তিময়। আল্লাহর হাবিব সা: আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয় সে শহীদ এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মারা যায় সেও শহীদ।’ (মুসলিম-১৯১৫)
হাদিসের আলোকে জানা যায়, যে ব্যক্তি নেক আমলরত অবস্থায় মারা যায় তার ভালো মৃত্যু হয়।

রাসূলল্লাহ সা: বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ‘লা ইলাহা ইল্লøাল্লাহ’ বলল এবং এ অবস্থায় তার মৃত্যু হলো সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (মুসনাদে আহমাদ-২২৮১৩)

আমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা কোনো সমস্যা হলে বা কোনো কাজে বাধাপ্রাপ্ত হলে সাথে সাথেই মৃত্যু কামনা করে; কিন্তু এটি হাদিসে নিষেধ আছে। বলা হয়েছে, ‘বিপদের কারণে তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কারো যদি মৃত্যুর প্রত্যাশা করতেই হয় তাহলে সে যেন বলে, হে আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রাখো যতক্ষণ আমার জীবন কল্যাণকর এবং আমাকে মৃত্যু দাও যখন আমার জন্য মৃত্যু কল্যাণকর।’ (বুখারি)

যারা আল্লাহর অনুগত বান্দা আল্লাহ তাদেরকে সবসময় সাহায্য করে থাকেন। তাই তো আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘নিশ্চয়ই যারা বলে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, অতঃপর তাতেই অবিচল থাকে তাদের ওপর ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং বলে তোমরা ভয় পেয়ো না, চিন্তিত হয়ো না এবং প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ করো।’ (সূরা ফুসসিলাত-৩০)

মৃত্যুর পর কবর হচ্ছে আখিরাতের প্রথম মঞ্জিল। যারা সহজে এ মঞ্জিল থেকে মুক্তি লাভ করবে তার জন্য সবকিছু সহজ হয়ে যাবে। এ জন্য আম্বিয়ায়ে কেরাম, সাহাবায়ে কেরাম, আওলিয়ায়ে কেরাম সবসময় কবরের যাবতীয় ভীতিকর বিষয়াবলি থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে অশ্রু ঝরিয়ে কাঁদতেন। রাসূলুল্লাহ সা:ও কবরের সবধরনের বিপদাপদ ও আজাব থেকে আশ্রয় লাভের জন্য তাঁর উম্মতকে কুরআন-সুন্নাহর বিধান পালনের তাগিদ দিয়েছেন। দোয়া শিখিয়েছেন। আল্লাহর রহমত কামনা করতে বলেছেন। মৃত্যুর সময় যার জবানে জারি থাকবে কালিমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তার সুন্দর মৃত্যু নসিব হবে।

এক হাদিসে জুমার দিনের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে অথবা রাতে মৃত্যুবরণ করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে কবরের আজাব থেকে মুক্তি দেবেন।’ (তিরমিজি-১০৭৪)

মহানুভব আল্লাহ জাল্লা শানহুর কাছে ফরিয়াদ করছি, হে আল্লাহ আপনি আমাদের কল্যাণকর মৃত্যু দান করুন এবং আমাদের ক্ষমা করে দিন; আপনি ছাড়া দয়া করার আমাদের তো আর কেউ নেই।

Related posts

কেউই কর্মের দ্বারা পরকালে পরিত্রাণ পাবে না

Asma Akter

যে প্রতিদান পাওয়া যাবে,জুমআ পড়তে আগেভাগে মসজিদে গেলে।

Asma Akter

ইসলামে জুমার দিন সর্বশ্রেষ্ঠ দিন।

Asma Akter

Leave a Comment