কানাডার সংবাদমাধ্যমগুলোকে বছরে ৭৪ মিলিয়ন বা ৭ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হবে। এ বিষয়ে কানাডা সরকারের সঙ্গে গুগলের চুক্তি হয়েছে।
কানাডার সংবাদমাধ্যমগুলোর কনটেন্ট বা আধেয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হলে সেখান থেকে যে রাজস্ব আয় হবে, তার একটি অংশ হিসেবে বছরে এই ৭ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার গুগলকে পরিশোধ করতে হবে।
চুক্তি হওয়ার কারণে এখন গুগলের পক্ষে কানাডার সংবাদমাধ্যমগুলোর কনটেন্ট বা আধেয় সরিয়ে ফেলা সম্ভব হবে না। কিন্তু ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মূল কোম্পানি মেটা চলতি বছরের শুরু থেকেই কানাডার সংবাদমাধ্যমগুলোর সংবাদ আধেয় প্রদর্শন করছে না।
গুগল কানাডার সংবাদমাধ্যমগুলোকে বছরে ৭ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তা হিসেবে দেবে। এই মূল্য অবশ্য মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
এক সংবাদ সম্মেলনে সেন্ট-ওঞ্জ আরও বলেছেন, এ চুক্তি কানাডার সংবাদমাধ্যমগুলোর জন্য ভালো হয়েছে। তবে বিশ্বের অন্য কোথাও যদি এর চেয়ে বেশি মূল্যের বিনিময়ে চুক্তি হয়ে থাকে, তাহলে কানাডা এ চুক্তি বিবেচনার অধিকার রাখে।
একই সঙ্গে ফেসবুককে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন সেন্ট-ওঞ্জ। তিনি বলেন, ‘আমরা গুগলের সঙ্গে একটি ন্যায্য চুক্তি করেছি। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, আইন কাজ করে। কিন্তু এখন ফেসবুককে জবাব দিতে হবে, তারা কেন নিজেদের প্ল্যাটফর্মকে ভুল ও মিথ্যা তথ্যের জন্য ছেড়ে দিয়েছে। আমাদের সংবাদমাধ্যম থেকে সংবাদ না নিয়ে কেন তারা এটা করছে।
চলতি বছরের জুন মাসের শেষ দিকে কানাডায় অনলাইন নিউজ অ্যাক্ট পাস হয়েছে। এ আইনের আলোকে কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যদি সংবাদমাধ্যমের আধেয় বা সংবাদ প্রচার করে বা তাকে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে, সে জন্য প্রকাশককে অর্থ দিতে হবে।
কিন্তু এ আইনের পরিপ্রেক্ষিতে মেটা কানাডার সংবাদমাধ্যমগুলোর সংবাদ তাদের প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ বা প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে। গুগলের মালিক প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটও প্রথমে মেটার পথ অনুসরণ করতে চেয়েছিল, যদিও শেষ পর্যন্ত তারা সে পথে হাঁটেনি।
মেটার ভাষ্য, কানাডা সরকারের এই অনলাইন নিউজ অ্যাক্ট ভুল ধারণার ভিত্তিতে প্রণয়ন করা হয়েছে। মেটা সংবাদমাধ্যমের সংবাদ আধেয় নিজেদের প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ করে লাভবান হয় বলে মনে করা হলেও ওই কোম্পানির মতে, বাস্তবতা ঠিক এর বিপরীত।
এ কারণে মেটা তাদের প্ল্যাটফর্মে কানাডার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ, ভিডিও-অডিও প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে। এর অর্থ হলো, কানাডায় বসবাসরত মানুষেরা ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে সে দেশের প্রকাশকদের দ্বারা প্রকাশিত সংবাদ, ভিডিও বা অডিও দেখতে পাচ্ছেন না। তবে কানাডার আউটলেটগুলো যেসব লিংক পোস্ট করছে, সেগুলো অন্যান্য দেশ থেকে দেখা যাচ্ছে।
মেটার এ উদ্যোগকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে মন্তব্য করেছেন প্যাসকেল সেন্ট-ওঞ্জ। তিনি বলেন, কানাডার সংবাদমাধ্যমগুলো জনবল ছাঁটাই করছে বা অনেক প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কানাডার সংবাদশিল্প এ রকম ঝুঁকিতে আগে কখনো পড়েনি।
মেটার এ উদ্যোগের বিপরীতে কানাডা সরকার বছরের শুরুর দিকে বলেছিল, তারা ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে বিজ্ঞাপন সম্প্রচার বন্ধ করে দেবে।
তবে এই প্রথম মেটা এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি, এর আগে ২০২১ সালে তারা অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে একই কাজ করেছিল। পরে অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার প্রকাশকদের সঙ্গে তারা চুক্তি করে।