লাইফ স্টাইলসর্বশেষস্বাস্থ্য

বেশি বেশি চিনি খেলেই কি ডায়াবেটিস হয়?

ডায়াবেটিস-pickynews24

ডায়াবেটিস কী?

ডায়াবেটিস এমন একটি শারীরিক অবস্থা যার কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে শর্করার মাত্রা অনেক বেশি বেড়ে যায়। এতে একবার কেউ আক্রান্ত হলে সারা জীবনের জন্যে তা বয়ে বেড়াতে হয়।

খাবার খাওয়ার পর শরীর সেই খাবারের শর্করাকে ভেঙে চিনিতে (গ্লুকোজ) রুপান্তরিত করে। আর এটি শরীরে শক্তির যোগান দেয়।

তবে ডায়াবেটিস হলে শরীরের কোষগুলো আগে যে চিনিকে জ্বালানি বা শক্তিতে পরিণত করতো, সেই চিনি কোষের পরিবর্তে রক্তের মধ্যে জমা হতে শুরু করে। ফলে ডায়াবেটিস হয়।

ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের দেয়া সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ডায়াবেটিস এমন এক দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা যার ফলে শরীর কার্যকরভাবে ইনসুলিন হরমোন তৈরি করতে পারে না।

“ডায়াবেটিস হলে মানুষের শরীরে গ্লুকোজ স্থায়ীভাবে বেড়ে যায়। আর কোন ধরনের প্রতিকার না নেয়া হলে এটা বাড়তেই থাকে। ফলে অনেক জটিলতা তৈরি হয়”, বলেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক একে আজাদ খান।

ডায়াবেটিস হলে কেবল চিনিই না, আরও অনেক বিপাকীয় সমস্যা তৈরি হয়। তবে রক্তে চিনির পরিমাণ মেপে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা হয় বলে এটি নিয়েই বেশি আলাপ-আলোচনা হয় বলে মনে করেন এই চিকিৎসক।

বাংলাদেশে এক কোটিরও বেশি মানুষ ডায়াবেটিক

ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৫৩ কোটিরও বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, আর এতে প্রতি বছর মৃত্যু হয় ৬৭ লাখ মানুষের।

এর মধ্যে আক্রান্তদের তিন-চতুর্থাংশ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের নাগরিক।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ২০২৩ সালে প্রকাশিত ডায়াবেটিস চিকিৎসার জাতীয় নির্দেশিকায় দেয়া তথ্যমতে, ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে অষ্টম।

বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩১ লাখ। এদের মধ্যে ২০ থেকে ৮০ বছর বয়সীদের মধ্যে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ এই রোগে ভুগছেন।

কত ধরনের ডায়াবেটিস আছে?

ডায়াবেটিস হয় মূলত দুই ধরনের। এগুলো হলো টাইপ-১ ডায়াবেটিস ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস।

টাইপ-১ ডায়াবেটিস মূলত জেনেটিক বা বংশগত। বাহ্যিক কোন কারণে কেউ টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয় না।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধ কেন্দ্র সিডিসি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, অটোইমিউন প্রতিক্রিয়ার কারণেই কোন ব্যক্তি টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। অর্থাৎ শরীর ভুল করে নিজেকে আক্রমণ করে।

এর ফলে শরীর নিজেই ইনসুলিন তৈরি বন্ধ করে দেয়।

ডায়াবেটিস আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ মানুষের টাইপ ১- ডায়াবেটিস আছে। একজন মানুষের যেকোনো বয়সে এই টাইপটি ধরা পড়তে পারে।

“একজনের পরিবারের কারও ডায়াবেটিস আছে, তার মানে ওই ব্যক্তির ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু সম্ভাবনা থাকলেই যে হবে এমনটা না।”

“কেউ যদি শারীরিক পরিশ্রম না করে, মুটিয়ে যায়, বিশেষ করে পেট মোটা হয়ে যায়- তাহলে তার ডায়াবেটিস হবে”, বলেন ড. খান।

টাইপ ১- ডায়াবেটিসে কেউ আক্রান্ত হলে শুরুতেই লক্ষণগুলো দেখা যায়। কারও যদি এই ডায়াবেটিস থাকে, তবে বেঁচে থাকার জন্য তাকে প্রতিদিন ইনসুলিন নিতে হয়।

টাইপ ১- ডায়াবেটিস প্রতিরোধের উপায় এখনো আবিষ্কার হয়নি।

অন্যদিকে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তের কারণ হলো অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন।

ডায়াবেটিস রোগীদের বেশির ভাগই টাইপ ২-তে আক্রান্ত হয়। সিডিসির হিসেব মতে, তা ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ।

সাধারণত বহু বছর ধরে এই টাইপের ডায়াবেটিস শরীরে দানা বাঁধে এবং প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর তা ধরা পড়ে।

“টাইপ ২-ডায়াবেটিসের শুরুতে সাধারণত উপসর্গ থাকে না। বরং (শরীরের ভেতরেই) বিভিন্ন জটিলতার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়” বলেন জাতীয় অধ্যাপক ড. খান।

সুস্থ জীবনযাপন যেমন- ওজন কম রাখা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং শরীরকে সক্রিয় রাখার মাধ্যমে টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

ডায়াবেটিসের কারণে কী ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে?

রক্তে চিনির পরিমাণ বেশি হলে রক্তনালীর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

শরীরে যদি রক্ত ঠিক মতো প্রবাহিত হতে না পারে, যেসব জায়গায় রক্তের প্রয়োজন সেখানে যদি এই রক্ত পৌঁছাতে না পারে, তখন স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

এর ফলে মানুষ দৃষ্টি শক্তি হারাতে পারে। ইনফেকশন হতে পারে পায়ে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অন্ধত্ব, কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়া, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ইত্যাদির পেছনে একটি বড় কারণ ডায়াবেটিস।

Related posts

‘প্রেমের বিয়ে’ বাড়াচ্ছে দাম্পত্য কলহ !

Megh Bristy

২০ লাখের বেশি বৈদ্যুতিক গাড়ি ফেরত নিচ্ছে টেসলা

Suborna Islam

টেলিভিশন লাইভে এসে পদত্যাগ হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট

Megh Bristy

Leave a Comment