বাংলাদেশেসর্বশেষ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে জুনিয়র শিক্ষক থাপ্পড় মারলো সিনিয়র শিক্ষককে

comillauniversity-pickynews24

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবু বক্কর সিদ্দীক মাসুমকে থাপ্পড় মারার অভিযোগ উঠেছে একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আলী মোর্শেদ কাজেমের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার বিভাগটির ১২১তম একাডেমিক সভায় কোর্স ভাগাভাগি নিয়ে বিতর্ক জড়িয়ে দুই শিক্ষকের মধ্যে এই ঘটনা ঘটে বলে একাধিক শিক্ষক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তবে এ নিয়ে মুখ খুলেননি ভুক্তভোগী শিক্ষক মো. আবু বক্কর সিদ্দীক মাসুম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা করতে দেখা গেছে।

মো. আবু বক্কর সিদ্দীক মাসুম বিভাগটির সাবেক বিভাগীয় প্রধান ছিলেন আর মো. আলী মোর্শেদ কাজেম তার জুনিয়র শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।

বিভাগের প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন শিক্ষক জানান, ১২১তম অ্যাকাডেমিক সভায় কোর্স ডিস্টিভিউশন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা ওঠে। তখন বলা হয়, জুনিয়র চারটি করে কোর্স নেবেন। কোর্স ডিস্টিবিউশনের শেষ দিকে দ্বিতীয় সেমিস্টারের একটা কোর্স নিয়ে আবু বক্কর সিদ্দীক আর আলী মোর্শেদ কাজেম বাকবিতণ্ডা করেন। এ সময় হঠাৎ করে আলী মোর্শেদ কাজেম গালের মধ্যে থাপ্পড় মেরে বসেন। পরে আবু বক্কর সিদ্দীক প্রতিবাদ করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষকরা বলেন, এ সময় আমরা বিভাগের শিক্ষকরা কাজেমকে রুম থেকে বের করে দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে৷ এ ঘটনায় মর্মাহত হয়ে এক শিক্ষক কান্না করে বের হয়ে যান।

বিভাগটির বিভাগীয় প্রধান আবু বক্কর সিদ্দিক সোহেল বলেন, প্রতিবেদন করার মতো কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে আমি মনে করি না। এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। যথাযথভাবে আমরা কোর্স ডিস্টিবিউশন করতে পেরেছি। সে ক্ষেত্রে বাড়তি কোনো কিছু হয়েছে বলে আমি মনে করি না।

তিনি বলেন, থাপ্পড় মারার মতো কোনো ঘটনা ঘটেছে আমি বলব না। যদি আপনাকে কেউ অভিযোগ করে থাকে আপনাকে সোর্সের নাম বললে আমি তার সূত্র ধরে কিছু বলতে পারি।

থাপ্পড়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, না আমি এটা বলব না। এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, আমরা সমাধান করে ফেলেছি। এ ধরনের কোনো কিছু ঘটেছে বলে আমি বিবৃতি দেব না। বিভাগ এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সমাধানও হয়ে গেছে। এরকম ঘটনা প্রত্যেকটা বিভাগে হয়ে থাকে। যেহেতু সমাধান করে ফেলেছি, তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করব না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এন এম রবিউল আউয়াল চৌধুরী বলেন, এই ঘটনা আমিও শুনেছি। যদি রিটেন কোনো কমপ্লেইন আসলে কথা বলতে পারতাম। তবে বিষয়টি আমি যতটুকু শুনেছি, এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি অবশ্যই নিন্দনীয় কাজ। যাইহোক, কোনোভাবেই একসেপ্টেটেড বিহেভিয়ার হতে পারে না একজন সহকর্মীর সাথে।

আরেক সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. কাজী কামাল উদ্দিন বলেন, যেটা শুনেছি সেটা যদি সত্যি হয়, তাহলে এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। বিভাগের একাডেমিক মিটিংয়ে জুনিয়র শিক্ষক দ্বারা সিনিয়র শিক্ষকে হেনস্তা করার বিষয়টি বাংলাদেশের ইতিহাসে আমার জানামতে রেকর্ড। এ ঘটনা যদি ঘটে থাকে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমের বিচারের আওতায় আনা উচিত যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন কাজে না করতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, এই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে আমি জানি না। যেহেতু এ বিষয়ে কিছু জানি না, তাই আমি মন্তব্য করতে পারব না।

এদিকে শিক্ষকদের কয়েকজন জানান, এর আগেও বিভিন্ন সময় দুজনে একাডেমিক মিটিংয়ে তর্কে জড়িয়েছিলেন। কিন্তু তখন গায়ে হাত তোলার মত বিষয় ঘটনা ঘটেনি।

ভুক্তভোগী শিক্ষক আবু বক্কর মাসুমের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। অভিযুক্ত আলী মোর্শেদ কাজেমকেও পাওয়া যায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এএফএম. আবদুল মঈনকে ফোন করে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে ব্যস্ততা দেখিয়ে কথা বলেননি।
এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ফেসবুকে বাংলা বিভাগের শিক্ষক নূর মোহাম্মদ রাজু লেখেন, কতো সহজেই একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আরেকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের গায়ে হাত তুলতে পারে। তাও আবার একাডেমিক কমিটির মতো জায়গায়।

ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক ড. হুসনে জাহান চৌধুরী লেখেন, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আরেকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের এর গায়ে হাত তুললো; তা ও আবার জুনিয়র সিনিয়রের উপর। এ অধঃপতনটা শুনাই বাকি ছিল। ছি ছি ছি!

এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া ফেসবুকে লেখেন, অনাচার কোন পর্যায়ে পৌঁছালে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কমিটির মিটিংয়ে একজন শিক্ষক তার সিনিয়র শিক্ষককে পিটিয়ে চশমা ভেঙে দেয়। এই শিক্ষক তার চাকরি পাওয়ার পর থেকে গত সপ্তাহ পর্যন্ত কোনো শিক্ষককে পেটাননি। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে সবসময় হাসিমুখে কথা বলতে দেখেছি। তাহলে এমন কী বদলালো যে তার সহকর্মী পেটানোর মতো অধঃপতন হলো?

Related posts

কালো আখ চাষ করে বাজিমাৎ,ফরিদপুরে

Asma Akter

চ্যাটজিপিটি সাপোর্ট নিয়ে স্মার্টওয়াচের বিক্রিবাট্টা শুরু

Rubaiya Tasnim

সাকিবের বাড়ির সামনে পুলিশি পাহারা, কি বলছেন সাকিবের বাবা ?

Mehedi Hasan

Leave a Comment