সরাসরি মনোবিদের সঙ্গে কথা বলা অনেকের জন্য কঠিন হয়ে যায়। আবার বিষয়টি জানাজানি হলে অনেক সময় আশপাশের মানুষের কটু কথা শুনতে হয়। তবে এসব সমস্যার সমাধান নিয়ে এসেছে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তায় প্রযুক্তিনির্ভর স্টার্টআপ ‘রিল্যাক্সি’।
নিজের মানসিক সমস্যার কারণে একসময় পেশাদার সাইকোলজিস্ট বা মনোবিদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রিল্যাক্সির সহপ্রতিষ্ঠাতা জাহ্নবী রহমান। একপর্যায়ে আত্মহত্যা করার কথাও ভেবেছিলেন। পরে মনোবিদের সঙ্গে কথা বলে সামলে ওঠেন তিনি। বুঝতে পারেন, তাঁর মতোই সমস্যায় ভুগছেন, এমন অনেকে রয়েছেন চারপাশে। কীভাবে তাঁদের সাহায্য করা যায়, সেই ভাবনা থেকে পরে তিনি ডেভেলপ করেন ‘রিল্যাক্সি’ অ্যাপটি।
‘মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা শুধু ধনীদের বিষয় নয়’—প্রথম আলোকে বলছিলেন জাহ্নবী রহমান। ‘সমাজের যেকোনো স্তরের মানুষ এ সমস্যায় পড়তে পারেন। ফলে সাধারণ রোগের চিকিৎসার মতো সবার মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষাও প্রয়োজন। আর এই মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই কাজ করছি আমরা।’
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে জাহ্নবী রহমান মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের ২০২৩ সালের এশিয়ার উদীয়মান তরুণদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় বেশ কয়েকটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করেছিলেন জাহ্নবী রহমান। এর মধ্যে একটি ছিল ‘ক্যাপ্টেন আর্থ’ গেম তৈরি। এ কাজে তাঁর সঙ্গী ছিলেন নাঈমুল হক ও সামিউল ইসলাম, যাঁরা পরে তাঁর সঙ্গে গড়ে তোলেন রিল্যাক্সি। মূলত ১৮ বছরের কম বয়সীদের সফট স্কিল বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে গেমটি তৈরি করা হয়েছিল। পরে এই গেমেই মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়গুলো যোগ করেন তিন উদ্যোক্তা।২০২০ সালের শেষ দিকের কথা। দেশে তখন করোনাভাইরাসের প্রকোপ চলছে। ওই সময়ে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) পরপর দুটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। তখন তাঁদের পরিচিত অনেকেই মনোবিদের সন্ধান করছিলেন। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে ক্যাপ্টেন আর্থ নামে ফেসবুকে একটি পেজ খোলেন তাঁরা। এর মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ মনোবিদদের সঙ্গে আগ্রহী ব্যক্তিদের সংযোগ স্থাপন করতে পারতেন। মাত্র ছয় মাসে হাজারের বেশি মানুষকে সেবা দেয় এই ফেসবুক পেজ।
জাহ্নবী রহমান মনে করেন, বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যা নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলা সহজ নয়। এ ছাড়া রাজধানী ঢাকার মতো শহরে যানজট এড়িয়ে মনোবিদের কাছে সশরীর যাওয়ার জন্য আলাদা সময় বের করাও অনেকের জন্য কঠিন হয়ে যায়। জাহ্নবী রহমান বলেন, এ ক্ষেত্রে রিল্যাক্সি অ্যাপের মাধ্যমে মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যে ঘরে বসেই একজন সনদপ্রাপ্ত মনোবিদের সেবা নিতে পারছেন গ্রাহকেরা। অর্থাৎ একজন গ্রাহক যোগাযোগ করার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই এই পেশাদারি সেবা পেয়ে যান।
রিল্যাক্সি অ্যাপের আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে গ্রাহকেরা সম্পূর্ণভাবে নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে মনোবিদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন। ফলে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সংশয় থাকে না। কল করে কথা বলার পাশাপাশি মনোবিদের সঙ্গে চ্যাট করারও সুযোগ আছে এই অ্যাপে; পাশাপাশি এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অডিও-ভিজ্যুয়াল মেডিটেশন ও সমমনাদের সঙ্গে কমিউনিটি চ্যাটের মতো সেবা।