বিনোদনসর্বশেষ

নানাকে আমি শেষ দেখা দেখতে পারিনি আক্ষেপ নাতির

নানাকে আমি শেষ দেখা দেখতে পারিনি আক্ষেপ নাতির

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেতা অমল বোস। পুরো নাম অমলেন্দু বিশ্বাস। বাংলাদেশ টেলিভিশনের যাত্রা শুরুর পর থেকেই টিভি নাটকে তিনি ছিলেন একজন পরিচিতি মুখ। পরবর্তীতে কাজ করেছেন বাংলা চলচ্চিত্রেও। ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে ‘নানা-নাতি’ কৌতুক নাটিকার মধ্য দিয়ে দৈনন্দিন জীবনের নানা অসঙ্গতির চিত্র তুলে ধরে বাংলাদেশের দর্শকদের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নেন ‘নানা’ অমল বোস।

‘নানা-নাতি’ কৌতুক নাটিকায় নাতি চরিত্রে অভিনয় করতেন নিপু। নিপুর পুরো নাম শওকত আলী তালুকদার। পর্দার সেই সম্পর্ক পরবর্তী সময়ে নানা-নাতির মতোই ছিল। ‘নানা’র জন্য এখনও নাতি নিপুর আফসোস রয়েছে।

অভিনয় থেকেই নানা অমল বোস ও নাতি নিপুর বোঝাপড়া শুরু। সম্পর্ক গড়িয়েছিল পরিবার পর্যন্ত। সময় পেলেই নিপু চলে যেতেন নানাবাড়ি। জীবনের অনেক কিছুই শিখেছেন অভিনেতা অমল বোসের কাছে। তাদের সেই জনপ্রিয় জুটি ভেঙে যায় ২০১২ সালে আজকের দিনে।

অমল বোসের প্রয়াণদিবসে প্রিয় মানুষকে স্মরণ করে নিপু বলেন, দিনটির কথা কখনোই ভুলব না। এই দিনেই আমি নানাকে হারিয়ে একা হয়েছি। প্রতিটা মুহূর্তে নানাকে আমি মিস করি। যেখানেই যাই, দর্শক এখনো বলেন, ওই যে নানার নাতি যায়। দর্শকেরা মনে করতেন আমরা সত্যিকারের নানা-নাতি। তখন মনে হয়, নানা আমার সঙ্গে আছেন। একসঙ্গে অভিনয় করে এমন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আর হয়েছে কি না, আমার জানা নেই। আমি আর দাদা ছিলাম মানিকজোড়। দর্শক আমাদের নানা-নাতি হিসেবে চিনলেও আমি অমলদাকে সব সময় দাদা বলতাম।

একসঙ্গে দেশের নানা প্রান্তে স্টেজ অনুষ্ঠান করতে যেতেন তারা। এই সময়টা ছিল নিপুর জন্য শিক্ষণীয়। তিনি অমল বোসের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতেন। নিপু বলেন, নানা আমাকে হাতে ধরে ধরে সব শিখিয়েছেন। তখন বুঝতাম, মানুষটা ভালো অভিনেতাই নন, ভালো একজন মানুষও। আমি তার সঙ্গে আড্ডা দিতে চাইতাম। ছুটে চলতাম দেশের আনাচকানাচে। বোঝাতেন, দর্শকেরাই শিল্পীর প্রাণ। তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে বলতেন। নানা কাছে নিয়ে বলতেন, এইভাবে মাইক্রোফোন ধরবি। এইভাবে মানুষের সঙ্গে কথা বলবি। একসঙ্গে অনেক সময় কেটেছে। নানা আমাকে শিখিয়েছেন, জীবনে খুব বেশি কাজের দরকার নেই। ভালো কাজ কম হলেও দর্শক সেই কাজ দিয়েই মনে রাখবে। সে কারণে এখনো কম কাজ করি।

নিপু জানান, ‘ইত্যাদি’তে অভিনয় করে আলোচিত হওয়ার পরই তারা বেশি ডাক পেতেন। দেশের নানা প্রান্তে অনুষ্ঠান করতে হতো। ভক্তরা কাছে পেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। নানা-নাতিকে ঘিরে ধরতেন। কেউ ছুঁয়ে দেখতে চাইতেন। কেউ বলতেন অভিনয় করে দেখাতে। কখনো তারা ভক্তদের সঙ্গেও জুড়ে দিতেন আড্ডা।

একসঙ্গে অভিনয় ও অনুশীলন করতে গিয়ে প্রায়ই তাদের দেখা হতো। নিপু বেশির ভাগ সময় ছুটে যেতেন অমল বোসের বাড়িতে। সম্পর্কটা একসময় পরিবার–ঘনিষ্ঠ হয়। তারা দেখা হলে মন খুলে কথা বলতেন। দুটি আক্ষেপের কথা শোনালেন নিপু।

অমল বোস মারা যাওয়ার আগে মাছ খেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ মারা যাওয়ার কারণে নানাকে মাছ খাওয়াতে পারেননি। এটাই তার বড় আক্ষেপ। জানালেন, যখন যেতেন, নানার পছন্দের ফল ও অন্যান্য খাবার সঙ্গে নিয়ে যেতেন। মাছ খাওয়ানোর আক্ষেপ আর ঘোচাতে পারবেন না। নিপু বলেন, আমার এই আক্ষেপ সারা জীবন মনে থাকবে। এখনো আমাকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয় মাছ খাওয়ানোর ঘটনাটা। নানা হঠাৎ মারা যান। আর সেই সময় আমি বিদেশে ছিলাম। নানাকে আমি শেষ দেখা দেখতে পারিনি, এই কষ্ট আমি আজীবন বয়ে বেড়াব। দুটি ঘটনা আমাকে খুবই কষ্ট দেয়।

গুণী সেই অভিনেতাকে হারানোর এক যুগ হয়ে গেল মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি)। ২০১২ সালের ২৩ জানুয়ারি ঢাকায় মারা যান তিনি। এদিন সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে অমল বোসকে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে নেওয়া হয়। দুপুর ১২টার দিকে চিকিৎসক জানান, তিনি মারা গেছেন।

১৯৪৩ সালে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় জন্ম নেওয়া অমল বোসের অভিনয়ে প্রবেশ যাত্রা মঞ্চ দিয়ে। অভিনয় পাগল এই মানুষটি ১৯৬৬ সালে ‘রাজা সন্যাসী’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। চলচ্চিত্র, মঞ্চ এবং টেলিভিশন সব মাধ্যমেই তিনি ছিলেন জনপ্রিয় এবং ভালোবাসার মানুষ।

সত্তরের দশকে পরিচালনায়ও নাম লিখিয়েছিলেন অমল বোস। তার পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘কেন এমন হয়’।

 

Related posts

৫ লাখ টাকা লাগতে পারে ব্যক্তির নামে কিন্ডারগার্টেন করতে

Rubaiya Tasnim

রাজের লাশও দেখতে চান না পরীমণি

Mehedi Hasan

হিট স্ট্রোক কি? হিট স্ট্রোকের কারণ ও প্রতিকার।

Megh Bristy

Leave a Comment