জাতীয়বাংলাদেশেসর্বশেষ

ইটভাটার কারণে কমছে ফসলি জমি অভিযোগ কৃষকদের

ইটভাটার কারণে কমছে ফসলি জমি অভিযোগ কৃষকদের

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার অবৈধ ইটভাটার কারণে প্রতিবছরই কমছে কৃষিজমি। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন লঙ্ঘন করে কৃষিজমিতে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটার প্রয়োজনীয় বৈধ কাগজপত্র নেই। ভাটা তিনটির মালিকেরা আইন লঙ্ঘন করে ফসলি জমি, লোকালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। ভাটার কারণে কমে গেছে আশেপাশের কৃষি জমির ফলন। পাশাপাশি, ইটভাটার ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গভীর রাতে দুই ও তিন ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ভাটায়। এসব মাটি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। উপজেলার তিনটি ভাটাই বলড়া ইউনিয়নে অবস্থিত। ভাটাগুলো হলো, স্বাধীন ব্রিকস, সততা ব্রিকস ও আমিন ব্রিকস। গত কয়েকবছরে শুধু বলড়াতেই কমেছে অন্তত ১০ একরেরও বেশি ফসলি জমি। এসব মাটি কেটে ইটভাটার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী, কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। এছাড়া, ইটের কাঁচামাল হিসেবে কৃষিজমির মাটি ব্যবহারও নিষিদ্ধ।

স্থানীয় কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করে বলেন, ভাটা নির্মাণের পর থেকে ফসলের উৎপাদন কমে গেছে। ফসলি জমির মাটি দিয়েই ভাটায় ইট প্রস্তুত করা হয়। ইট পোড়ানো ধোঁয়ার গন্ধে শ্বাসকষ্ট হওয়ায় অনেক সময় জমিতে কাজ করতেও সমস্যা হয় কৃষকদের। তারা প্রশাসনের কাছে দ্রুত ভাটাগুলো বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

সম্প্রতি সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আমিন ব্রিকস সংলগ্ন মালিকের নিজস্ব কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে ভাটায় নেয়া হচ্ছে। ভাটার কয়েকজন শ্রমিক জানান, কয়েকদিন আগে পাশের আরেকটি জমি থেকে মাটি আনা হয়েছে। ইটভাটার সার্বিক দেখাশোনা করেন নুরুল আমিনের ছেলে শামীম হোসেন। সরজমিনে ভাটায় তাকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে শামীম হলেন, ওটা আমাদের পুরনো ভাটার জমি। কৃষিজমির মাটি আমরা ব্যবহার করিনা। তবে, মাটি কোথা থেকে আনেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কাজের জন্য একটু বাইরে আছি। আগামীকাল কষ্ট করে একটু আসেন। কথা বলবো, সমস্যা নেই।

অপরদিকে স্বাধীন ব্রিকসের পাশে কয়েকটি জমি থেকে মাটি কাটতে দেখা যায়। এসব মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। মাটি কাটার কারণে পার্শ্ববর্তী লতিফ মোল্লা, মোশারফ ও মোতালেবের জমির বেশকিছু অংশ ধ্বসে পড়েছে। মঙ্গলবার (২৯ ও ৩০ জানুয়ারি) দানিস্তপুর গ্রামের ৫৬ জন কৃষক ও স্থানীয় বাসিন্দা মিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর কৃষি জমি রক্ষা ও মাটি কাটা বন্ধের জন্য স্বাধীন ব্রিকসের মালিকদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক লতিফ মোল্লা বলেন, গতবছর আমার ৬ শতাংশ জমির পাশের জমি থেকে মাটি কাটার কারণে আমার জমির কিছু অংশ ধ্বসে পড়েছিল। পরে ইটভাটার পার্টনার সজিব বলেছিল জমি বেঁধে দিবে। আর দেয়নি। এবছর আবার মাটি কাটার জন্য আমার জমি ধ্বসে পড়েছে। আমরা তাদের কিছু বলতে পারিনা। তারা ইচ্ছা করেই এমনভাবে মাটি কাটে, যাতে চারপাশের জমি ধ্বসে পড়ে এবং তাদের কাছেই বাধ্য হয়ে বিক্রি করে।

ধ্বসে পড়া আরেক জমির মালিক মোশাররফ বলেন, আমার ২০ শতাংশ জমির একাংশ ধ্বসে পড়েছে। গভীর রাতে ইচ্ছাকৃতভাবে এমনভাবে মাটি কাটে যাতে পাশের জমির মাটি ধ্বসে পড়ে। এরপর জমির মালিকরা যাতে তাদের কাছেই জমি বিক্রি করতে বাধ্য হন। রাতের বেলায় আমাদের পক্ষে তো আর জমিতে গিয়ে বসে থাকা সম্ভব না।

স্থানীয় আরেক কৃষক সাহেব আলী বলেন, ইটভাটার জন্য বছর বছর কৃষি জমির পরিমাণ কমছে। ফসলের উৎপাদন কমে গেছে। তাদের মাটি কাটার কারণে পার্শ্ববর্তী জমির মালিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভাটার ধোঁয়ার গন্ধে জমিতে কাজ করতেও সমস্যা হয়।

এ বিষয়ে জানতে স্বাধীন ব্রিকস ও সততা ব্রিকসে গেলে মালিকপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে, মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে স্বাধীন ব্রিকসের একাংশের মালিক শীতল চৌধুরী বলেন, ‘এ বিষয়ে পরে কথা বলবো।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার রহমান সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গতকাল একটা অভিযোগ পেয়েছি। সেটা এসিল্যান্ডকে দেওয়া হয়েছে, তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।

মুঠোফোনে সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাপসী রাবেয়া বলেন, “ইউএনও অফিস থেকে অভিযোগের বিষয়টি শুনেছি তবে এখনো আমি হাতে পাইনি। অবৈধ এবিষয় গুলোতে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।”

Related posts

আজকের নামাজের সময়সূচি: ২৫ জানুয়ারি ২০২৪

Asma Akter

আজ পবিত্র শবে মেরাজ

Megh Bristy

ডায়াবেটিস থেকে দূরে রাখবে যে ফল!

Megh Bristy

Leave a Comment