ইসলাম ধর্মজাতীয়বাংলাদেশেসর্বশেষসারাদেশ

এক মসজিদে ৩৫ বছর, সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে ইমামকে বিদায়

এক মসজিদে ৩৫ বছর, সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে ইমামকে বিদায়

রঙ-বেরঙের বেলুন দিয়ে সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে ফুলেল শুভেচ্ছায় মসজিদের ইমামকে বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছেন মুসল্লিরা। দীর্ঘ ৩৫ বছর সুনামের সঙ্গে ইমামতি করায় মুসল্লিরা এমন আয়োজন করে বিদায় দিয়েছেন কাপাশপাড়া বাইতুন নূর জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ ওয়াজউদ্দিন শেখকে।

শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) জুমার নামাজ শেষে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কাপাশপাড়া বাইতুন নূর জামে মসজিদের ইমামকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

সংবর্ধনা পাওয়া হাফেজ ওয়াজউদ্দিন শেখ নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের উপসী এলাকার মৃত রমিজউদ্দিন শেখের ছেলে।

এক মসজিদে ৩৫ বছর, সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে ইমামকে বিদায়

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নড়িয়া উপজেলার বিঝারী এলাকার কাপাশপাড়া বাইতুন নূর জামে মসজিদটি ১৮৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৮৪ সালে হাফেজ ওয়াজউদ্দিন শেখ যখন মসজিদে ইমামতি করতে আসেন তখন ছোট্ট একটি টিনের ছাউনির মসজিদ ছিল এটি। মাত্র ২২ মণ ধানের বিনিময়ে সেখানে ইমামতি শুরু করেন তিনি। একটানা ৩৫ বছর ইমামতি করে এখন তার বয়স ৭৫ বছর। দীর্ঘদিন ইমামতি শেষে বার্ধক্যের কারণে আজ তিনি অবসর নিলেন। এদিকে গ্রামবাসীও তার বিদায়বেলাকে স্মরণীয় করতে  বিশাল আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ইমামের সম্মানে বিদায়বেলায় তাকে সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়ি প্রস্তুত করে সেই গাড়িতে চড়িয়ে বাড়ি পৌঁছে দেন এলাকাবাসী। এ সময় নগদ ১ লাখ টাকাসহ অন্যান্য উপহার সামগ্রী দেওয়া হয় তাকে।

এমন বিদায়ী সংবর্ধনা পেয়ে হাফেজ ওয়াজউদ্দিন শেখ আবেগ আপ্লুত হয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি যখন এখানে আসি মসজিদটি জানালা কপাট ছাড়া ছোট একটি টিনের ঘর ছিল। আমি সামান্য একটি মাদুর বিছিয়ে থাকতাম। উঁই পোকায় বিছানা খেয়ে ফেলতো। তবে আমার একটাই চিন্তা ছিল কীভাবে এলাকার মুসল্লিদের নিয়ে মসজিদটিকে সুন্দর করা যায়। আস্তে আস্তে সবাইকে নিয়ে কাজ শুরু করি। বর্তমানে মসজিদটি দোতলা হয়েছে। এখন আমার বয়স হয়ে যাওয়ায় আজ এই মসজিদ ছেড়ে বিদায় নিতে হচ্ছে। কিন্তু আমার মন চাইছে না বিদায় নিতে। এলাকার সকলে আমাকে অনেক সম্মান দেখিয়েছে। আল্লাহ তাদের সবাইকে ভালো রাখুক।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মান্নান চৌকিদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, হুজুর যখন আমাদের এখানে আসেন তখন মসজিদটি জরাজীর্ণ ছিল। তাকে আমরা বেতন দিতে পারিনি, শুধু এলাকা থেকে ধান উঠিয়ে দিতাম। তারপরও তার কোনো অভিযোগ ছিল না। আমাদের এলাকার সন্তানদের তিনি ইসলাম শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি অনেক কষ্ট করে সেই মসজিদটিকে পাকা দোতলায় পরিণত করেছেন। আজ হুজুর চলে যাওয়ায় আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। বাড়ির মহিলারাও রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল হুজুরকে এক নজর দেখার জন্য।

মসজিদ কমিটির সভাপতি রাশেদুজ্জামান চপল খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজকের দিনটি আমাদের জন্য বেদনার। কেননা আমরা আমাদের আত্মার আত্মীয়কে বিদায় দিচ্ছি। যিনি দীর্ঘ ৩৫ বছর আমাদেরকে দ্বীনি শিক্ষায় আলোকিত করেছেন। আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ। আল্লাহ তাকে সুস্থ রাখুন, ভালো রাখুন এটাই আমাদের কামনা।

Related posts

কিশোরগঞ্জের এক মাদরাসাছাত্রী হিজাব পড়ার সময় পিন গিলে ফেললেন

Asma Akter

তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো

Asma Akter

গর্ভধারিনীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত

Asma Akter

Leave a Comment