পৃথিবী তার নিজের অক্ষের চারদিকে ঘোরে। ২৪ ঘণ্টায় একবার পুরো চক্কর দেয়। এই ২৪ ঘণ্টাতেই দিন-রাত হয়। এইভাবে নিজের অক্ষের চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ৩৬৫ দিনে একবার পাক খেয়ে আসে। এখন প্রশ্ন হল,পৃথিবী ১ সেকেন্ডের জন্য ঘোরা বন্ধ করলে কী হবে?
পৃথিবীর ঘূর্ণন বন্ধ হলে কী হবে?
মারাত্মক কাণ্ড ঘটে যাবে। দিন-রাত বলে আর কিছু থাকবে না। সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত হবে না। ছয় ঋতুই উবে যাবে। আর সেই সঙ্গে ঘটবে একের পর এক দুর্যোগ।
বিষুবরেখা অঞ্চলে পৃথিবী ঘণ্টায় প্রায় ১০০০ মাইল বেগে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে নিজ অক্ষরেখার চারদিকে ঘুরছে। এ অবস্থায় যদি থেমে যায়, তাহলে মহাপ্রলয় ঘটে যাবে। হঠাৎ করে ঘূর্ণন বন্ধ হয়ে গেলে মানুষ, পশুপাখি, ঘরবাড়ি, নদী-সমুদ্র, পাহাড়-পর্বত সব পর্যন্ত মহাশূন্যে পূর্ব দিকে ছিটকে পড়বে। ঘরবাড়ি ভেঙে পড়বে। বাস বা গাড়ি চলতে চলচে দুম করে ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে পড়লে যেমন মানুষজন সামনের দিকে ছিটকে পড়ে, ঠিক তেমনই পৃথিবী ঘোরা বন্ধ করলে পৃথিবীপৃষ্ঠের উপরে যা কিছু আছে সবই ছিটকে মহাশূন্যে চলে যাবে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর এই ঘূর্ণনের জন্যই অভিকর্ষজ বল, মাধ্যাকর্ষণ শক্তির জন্ম হচ্ছে। কাজেই ঘোরা বন্ধ হলে মাধ্যাকর্ষণ কাজ করা বন্ধ করে দেবে। কোনও প্রাণী বা জড় বস্তু তখন পৃথিবী পৃষ্ঠের উপর টিকে থাকতে পারবে না। বিপরীতমুখী শক্তি তৈরি হবে যা সবকিছুকে ওলটপালট করে ছিটকে বাইরে ফেলবে। সেই সঙ্গে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় বইতে থাকবে। বাতাসের বেগ ও গতিপথও পৃথিবীর ঘূর্ণনের উপরেই নির্ভর করে। পৃথিবী ঘুরছে বলেই বাতাস সবজায়গায় সমানভাবে প্রবাহিত হচ্ছে। কাজেই ঘোরা ১ সেকেন্ডের জন্যও বন্ধ হলে প্রচণ্ড গতির বাতাস থমকে গিয়ে একইজায়গায় ঘুরপাক খেতে থাকবে। হাজার হাজার হারিকেনের মতো প্রলয়ঙ্কর ঝড় বইতে শুরু করবে। প্রাণের অস্তিত্ব পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
পৃথিবী যদি চিরতরে তার ঘূর্ণন থামিয়ে দেয়, তাহলে পৃথিবীতে দিন রাত হওয়া বন্ধ হয়ে যাবে৷ পৃথিবীর যে দিকটা সূর্যের দিকে থাকবে, সেখানে হুহু করে বেড়ে যাবে তাপমাত্রা, আর যে দিকটা সূর্যের বিপরীতে থাকবে, সেদিকে নেমে আসবে হিম শীতলতা৷ সেই সঙ্গে জোয়ার-ভাঁটা বন্ধ হয়ে যাবে। চাঁদের সঙ্গে পৃথিবীর এই আত্মিক টান ঘূর্ণনের উপরেই নির্ভরশীল। তবে মহাকাশবিজ্ঞানীরা বলছেন, কৌণিক ভরবেগের নিত্যতার সূত্র অনুযায়ী পৃথিবীর ঘূর্ণন প্রক্রিয়া থামার কোনও কারণ নেই। আরও হাজার হাজার কোটি বছর ধরে এই প্রক্রিয়া চলবে। যদি পৃথিবীর থেকেও আকারে ও ভরে বিশাল কোনও মহাকর্ষীয় বস্তুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘাত হয় তাহলে ভরবেগে পরিবর্তন আসতে পারে। তখন ঘূর্ণন থমকে গেলেও যেতে পারে। আর সেটাই হবে ধ্বংসের শুরু। একবার ঘূর্ণন থেমে গেলেই সবকিছ মহাশূন্যে ভেসে যাবে, তখন আর দিন-রাত হল কিনা বা ঋতু বদলাল কিনা তা ভাবার মতো অবকাশও থাকবে না।