প্রিয় নবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার জন্য ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে, কিয়ামতের দিন সে এমনভাবে উপস্থিত হবে যে, তার ওপর জাহান্নাম হারাম হয়ে গেছে।’ (আহমাদ-১৬৪৮২)
এ কথা সত্য যারা কালেমা পড়বে তারা নিঃসন্দেহে ঈমানদার; কিন্তু ঈমানের কিছু দাবি আছে সেগুলো পূরণ না করলে তখন ঈমান পূর্ণতা পায় না।
ইবনে উমর রা: থেকে বর্ণিত- আল্লাহর রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি-
১. আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মদ সা: আল্লাহর রাসূল- এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা।
২. সালাত কায়েম করা।
৩. জাকাত আদায় করা।
৪. হজ সম্পাদন করা এবং
৫. রমজানের সিয়ামব্রত পালন করা।
বুখারির এক বর্ণনায় রয়েছে- ‘উমর ইবনে আবদুল আজিজ রহ: আদি ইবনে আদি রহ:-এর কাছে এক পত্রে লিখেছিলেন, ‘ঈমানের কতগুলো ফরজ, কতগুলো হুকুম-আহকাম, বিধি-নিষেধ এবং সুন্নাত রয়েছে। যে এগুলো পূর্ণভাবে আদায় করে, তার ঈমান পূর্ণ হয়। আর যে এগুলো পূর্ণভাবে আদায় করে না, তার ঈমান পূর্ণ হয় না।’
শুধু মুখে বললে সবকিছু পূর্ণতা পায় না; তাকে কাজে পরিণত করতে হয়। ধরুন, আপনি একজন পাইলট; তো আপনাকে কী করতে হবে- দক্ষতার সাথে বিমান চালনা করতে হবে। কিন্তু আপনি যদি সে দায়িত্ব পালন না করে ঘরে বসে থাকেন তবে তার কি কোনো দাম আছে? লোকে যদি হাজারবার বলে- পাইলট-পাইলট; আপনার কি দুই পয়সা লাভ হবে? আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আপনাকে ঈমান দান করেছেন; আপনার নাম মহান আল্লাহর রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এটি যেমন ঠিক তেমনি অবাধ্যতার কারণে যেকোনো মুহূর্তে সেই নাম কাটাও যেতে পারে। তখন আল্লাহ তায়ালার কাছে ধরনা দিয়ে কান্নাকাটি না করে আপনার উপায় আছে কি?
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা সৌভাগ্যবান তাদেরকেই বলেছেন-‘যারা দাঁড়িয়ে বসে শুয়ে আল্লাহর নাম স্মরণ করে এবং আসমানগুলোর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে আর বলে, হে আমাদের রব! আপনি এগুলো অকারণে সৃষ্টি করেননি। আপনি অত্যন্ত পবিত্র, আপনি আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।’ (সূরা আলে ইমরান-১৯১)
উল্লিখিত সূরার সংক্ষিপ্ত তাফসিরে বলা হয়েছে- আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি ও সৃষ্টিজগতের ওপর চিন্তাভাবনা করে তাঁর মাহাত্ম্য ও কুদরত সম্পর্কে অবগত হওয়া একটি মহৎ ও উচ্চ পর্যায়ের ইবাদত। সেগুলোর মধ্যে গভীর চিন্তা করে তা থেকে কোনো শিক্ষা গ্রহণ না করা একান্তই নির্বুদ্ধিতা। উল্লিখিত আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে- আল্লাহ তায়ালার সীমাহীন সৃষ্টির ওপর যে লোক চিন্তাভাবনা করে সে সহজেই বোঝে যে, এসব বস্তুসামগ্রী আল্লাহ তায়ালা নিরর্থক সৃষ্টি করেননি; এসব সৃষ্টির মধ্যে হাজারো তাৎপর্য নিহিত আছে। এসব কিছু মানুষের সেবায় নিয়োজিত করে দিয়ে মানুষকে চিন্তাভাবনা করার আহ্বান জানানো হয়েছে যে, এ মহাবিশ্ব তাদের কল্যাণের জন্য তৈরি করা হয়েছে এবং তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের উদ্দেশ্যে যেন তারা দুনিয়ায় শান্তি ও আখিরাতে মুক্তি লাভ করতে পারে। আর এটিই হলো মুমিনের জীবনের মূল লক্ষ্য। আল্লাহ তায়ালার কাছে বান্দার কোনো আমল প্রত্যাখ্যান করা হয় না। এ ব্যাপারে আল্লাহ জাল্লা শানুহু কুরআনুল কারিমের সূরা আলে ইমরানের ১৯৫ নম্বর আয়াতে বলেন- ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মধ্যে আমলকারী কোনো নর-নারীর আমল বিফল করি না।’
আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য চাইলে তিনি খুশি হন। তাই দুনিয়ার কারো কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে ছোট হওয়ার দরকার কী? কারো শান-শওকত দেখে প্রলুব্ধ হওয়ার দরকার নেই।
‘আল্লাহ তায়ালা তোমাদের একজনের ওপর আরেকজনকে যা (কিছু বেশি) দান করেছেন, তোমরা (তা পাওয়ার) লালসা করো না, যা কিছু পুরুষরা উপার্জন করল তা তাদেরই অংশ হবে; আবার নারীরা যা কিছু অর্জন করল তাও (হবে) তাদেরই অংশ; তোমরা আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে তাঁর অনুগ্রহ (পাওয়ার জন্য) প্রার্থনা করো; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিবহাল রয়েছেন।’ (সূরা আন-নিসা-৩২)
দুনিয়া ও আখিরাতে মুক্তির জন্য আল্লাহর হুকুম মান্য করা যেমন কর্তব্য তেমনি তাঁর রাসূলের আনুগত্য করার বিকল্প নেই।
আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘সেই আল্লাহর শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা ও সন্তানাদির চেয়ে অধিক ভালোবাসার পাত্র হই।’ (বুখারি-১৪)
মহান আল্লাহ কুরআনুল কারিমে বলেছেন- (অপর দিকে) সেসব (সৌভাগ্যবান) মানুষ, যারা নিজেরা (চোখে) না দেখেও তাদের সৃষ্টিকর্তাকে ভয় করেছে, নিঃসন্দেহে তাদের জন্য রয়েছে (আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে) ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। (সূরা আল-মুলক-১২)