লাইফ স্টাইল

পান্তা-ইলিশের পুষ্টিগুণ

বৈশাখী আনন্দের অন্যতম অংশ হলো পান্তা-ইলিশ। এই পান্তা-ইলিশের রয়েছে নানারকমের স্বাস্থ্য উপকারিতা। এই পান্তায় রয়েছে শক্তিশালী এবং পুষ্টিকর সব খাদ্য উপাদান। বৈশাখ মানেই সবার আগে মনে আসে পান্তা-ইলিশের কথা। এই পান্তা-ইলিশের পুষ্টিগুণ এবং তা কেমন করে আমাদের সুস্বাস্থ্য ধরে রাখতে ভূমিকা রাখে সে সম্পর্কে বলেছেন-ট্রেইনার অ্যান্ড কনসালটেন্ট অব ন্যাচারোপ্যাথি অ্যান্ড ইয়োগা- ঐন্দ্রিলা আক্তার

পান্তা ভাতের পুষ্টিগুণ

১০০ গ্রাম পান্তা ভাতে ৭৩.৯১ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে, যেখানে সমপরিমাণ গরম ভাতে থাকে মাত্র ৩.৪ মিলিগ্রাম। ১০০ গ্রাম পান্তা ভাতে পটাশিয়াম থাকে ৮৩৯ মিলিগ্রাম এবং ক্যালসিয়াম ৮৫০ মিলিগ্রাম, সমপরিমাণ গরমভাতে ক্যালসিয়াম থাকে মাত্র ২১ মিলিগ্রাম।

১০০ গ্রাম পান্তা ভাতে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে হয় ৩০৩ মিলিগ্রাম, যেখানে সমপরিমাণ গরমভাতে সোডিয়াম থাকে ৪৭৫ মিলিগ্রাম।

পান্তা ভাতের স্বাস্থ্য উপকারিতা

১. সাধারণ ভাতের তুলনায় পান্তাভাতে আয়রনের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২১ গুণ যা এনিমিয়া বা রক্তশূন্যতা সারাতে সাহায্য করে। ২. লাল চালের পান্তা ভাতে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং সেলেনিয়াম থাকে অনেক বেশি যা হাড় এবং মাংসপেশির শক্তি বাড়ায়। ৩. সাধারণ ভাতের তুলনায় পান্তাভাতে সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকে কিন্তু পটাসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই পান্তাভাত উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য উপকারী। ৪. গরম ভাতের তুলনায় পান্তাভাতে ফ্যাট ৬ গুণ কম থাকে।

তাই এটি রক্তে কোলেস্টেরল কমায় এবং স্লিম থাকতে সাহায্য করে। ৫. পান্তাভাতে প্রচুর পানি থাকার কারণে পায়খানা নরম এবং সহজে হয়। তাই পান্তা কোষ্ঠবদ্ধতা সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। ৬. ভাত সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখার ফলে এনজাইমের কর্মক্ষমতা বেড়ে যায় ফলে হজম ভালো হয়। তাই এটি গ্যাস্ট্রিক এবং আলসার সারাতে কাজ করে। ৭. পান্তাভাত দেহে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করে দেহকে পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা করে এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তাই তীব্র গরমে হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে পান্তাভাত। ৮. পান্তাভাতে আছে ভিটামিন সি এবং কোলাজেন যা ত্বক ভালো রাখে এবং এলার্জি প্রতিরোধ করে। ৯. পান্তাভাত খেলে ভালো ঘুম হয়। তাই অনিদ্রা কাটাতে পান্তা ভাতের জুড়ি নেই। ১০. ১০০ গ্রাম পান্তাভাতে প্রায় তিন ট্রিলিয়ন ভালো ব্যাকটেরিয়া বা প্রোবায়োটিকস থাকে। এরা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো রাখে। তবে ডায়াবেটিস রোগী এবং বয়স্ক মানুষেরা পান্তা না খাওয়াই ভালো। এবার আসি ইলিশ কথনে। ইলিশ ভাজা, সর্ষে ইলিশ, ভাপা ইলিশ, ইলিশ পাতুরি, দই ইলিশ, ইলিশ পোলাও, পান্তা ইলিশ, ইলিশ মাছের নানারকম বাহারি পদের রান্না ছাড়া যেন বাঙালিদের খাবারে তৃপ্তি আসে না। কারণ ইলিশ মাছ স্বাদে যেমন অতুলনীয় তেমনি পুষ্টিগুণেও ভরপুর।

ইলিশ মাছের পুষ্টিগুণ

ইলিশ মাছের সবচেয়ে বড় পুষ্টি উপাদান হলো ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড। যা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে এবং সারাতে ভূমিকা রাখে। এছাড়াও রয়েছে নায়সিন, ট্রিপ্টোফ্যান, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন সি।

প্রতি ১০০ গ্রাম ইলিশ মাছে আছে প্রায় ২৫ গ্রাম প্রোটিন, ৩.৩৯  গ্রাম শর্করা এবং ১৯.৪ গ্রাম ফ্যাট। ইলিশ মাছে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়ামসহ প্রয়োজনীয় সব মিনারেলস।

ইলিশ মাছের স্বাস্থ্য উপকারিতা

ইলিশ মাছে উচ্চমাত্রায় ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড থাকায় রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড (খারাপ চর্বি) কমিয়ে রক্তে এইচডিএল (ভালো চর্বি) বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে রক্ত চলাচল ভালো হয় এবং হার্ট ভালো থাকতে সাহায্য করে, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। ইলিশ মাছের উচ্চ ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড আরও যেসব রোগ সারাতে উপকারীÑ অস্টিওআর্থ্রাইটিস ও রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিস আলসার, কোলাইটিস মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা এবং স্নায়ুকোষ সুস্থ রাখে। ফলে স্মৃতিশক্তি ভালো থাকে। অবসাদ এবং বিষণœতা কাটাতে সাহায্য করে।  দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও ইলিশ মাছ খেলে- ত্বক সুস্থ থাকে এবং তারুণ্য বজায় থাকে। থাইরয়েড গ্রন্থি ভালো থাকে এবং গলগ- রোগ প্রতিরোধ করে। উচ্চরক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ইলিশ মাছ ক্ষতিকর নয়। বৈশাখী আনন্দে পান্তা-ইলিশ শুধু ভোজনের আনন্দই বাড়ায় না দেয় স্বাস্থ্য আনন্দও। শুভ হোক পহেলা বৈশাখ।

Related posts

ঘরে বসে সহজেই গৃহিণীরা, যেভাবে ইনকাম করবেন।

Asma Akter

চলুন জেনে নেওয়া যাক কেন কাঁচা পেঁপে খাবেন

Asma Akter

কেন পান করবেন ‘হার্বাল চা’

admin

Leave a Comment