স্বাস্থ্য

ভয়ংকর হয়ে উঠছে ডেঙ্গু, মৃত্যু ছাড়ালো ৩শ,নতুন ২ হাজার ৪৯৫ জন রোগী

কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তার ‘ছিন্নমূল কবিতায় পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্যের মৃত্যুতে তীব্র শোকের যে মর্মস্পর্শী ছবি এঁকেছিলেন তা আজও সবাইকে স্পর্শ করে। ছন্দে ছন্দে লেখা সেই শোকগাঁথায় ‘দিনের আলো আঁধার করে, চলে যাওয়া সেই শিশুটিকে মনে করে ছন্দের জাদুকর লিখেছিলেন, ‘ছেড়ে গেছে পুতুল, পুতির মালা/ছেড়ে গেছে মায়ের কোলের দাবি/ভয়-তরাসে ছিলে যে সব-চেয়ে/সেই খুলেছে আঁধার ঘরের চাবি।’

মর্মস্পর্শী এই ছন্দই যেনো বাস্তব হয়ে দেখা গেলো গত শুক্রবার রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে। মায়ের কোলের দাবি আর দাদির বুকের ওম ছেড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৮ বছরের শিশু আয়াতের মৃত্যুতে হাসপাতালের নার্স-চিকিৎসকরাও আটকাতে পারেন নি চোখের পানি। শুধু আয়াতের মৃত্যুই নয় সম্প্রতি ভয়াবহ হয়ে উঠা ডেঙ্গুর সংক্রমণে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু।

গত ২৪ ঘন্টায়ও এর সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। এ নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মৃত্যু ছাড়ালো ৩শ জনে। নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৪৯৫ জন। প্রতিদিনই আপনজনকে হারিয়ে হাসপাতালের আঙ্গিনা ভারী হয়ে উঠছে স্বজনদের হাহাকারে।

শনিবার (৫ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ১০ জনকে নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০৩ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৪৯৫ জন। এর আগে গত ৩০ জুলাই একদিনে দুই হাজার ৭৩১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন, যা একদিনে এ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

এর আগে ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে  ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। একই সঙ্গে আলোচ্য বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। ২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গু সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

আগেই আশংকা করা হয়েছিলো ভরা মৌসুমে এবার ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে এডিস মশার দৌরাত্ম্য। আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যাও ছাড়াতে পারে আগের সব রেকর্ড। তারই সংকেত যেনো পাওয়া যাচ্ছে সম্প্রতি। যা এর আগে কখনো হয় নি। চলতি বছরের শুরুর মাস অর্থাৎ জানুয়ারিতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো মাত্র ৫৬৬ জন। ওই মাসে ডেঙ্গুতে মারা যায় ৬ জন। এর পরের মাস ফেব্রুয়ারিতেও আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ছিলো সীমিতই। ওই মাসে আক্রান্ত হয় ১৬৬ জন আর মৃত্যু হয় ৩ জনের। মৃত্যুশূণ্য ছিলো মার্চ মাস। পুরো মাসে আক্রান্তের সংখ্যা চিলো ১১১ জন। তবে এপ্রিলে মারা যায় ২ জন। আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো ২ জন। মে মাসেও মারা যায় ২ জন। ওই মাসে আক্রান্ত হয় ১ হাজার ৩৬ জন। পরে একলাফে ৫ হাজার ৯৬৫ জন আক্রান্ত হয় জুনে।

মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪ জনে। যা জুলাই মাসে ছাড়ায় আগের সব রেকর্ড। আর এর অন্যতম কারণ হিসেবে ডেঙ্গুর প্রজননস্থল ধ্বংসে ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন তারা। একই সঙ্গে আবহাওয়ার তারতম্যও সমানভাবে দায়ী উল্লেখ করে তারা বলছেন, এখনি এডিসের জীবাণুবাহী মশার প্রজননস্থল ধ্বংস না করতে পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

Related posts

কাশি নিরাময়ের নয়টি ঘরোয়া উপায়?

Megh Bristy

রাতের খাবার আগে খাওয়া উচিত, যে পাঁচটি কারণে

Asma Akter

কি ভাবে বুঝবেন আপনার থাইরয়েড হয়েছে কিনা

Asma Akter

Leave a Comment