মতামত

পুরুষ কীসে আটকায়?

সম্প্রতি একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা, তর্ক- বিতর্ক চলছে। দীর্ঘ ১৮ বছরের সংসার জীবনের ইতি টেনেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও তার স্ত্রী সোফি গ্রেগরি ট্রুডো। এ খবর জানার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনার।  বইতে শুরু করে মিম, ট্রল আর পোস্ট–পাল্টা পোস্টের ঝড়। দু:খজনক হলেও সত্য যে, এরই মধ্যে চালু হয়েছে একটি ট্রেন্ড। ‘নারী কীসে আটকায়?’ আর তাতে গা ভাসিয়েছেন অনেকেই।

আমার প্রশ্ন হলো, কেন শুধু নারীর প্রতিই এমন ‘আটকে থাকার’ প্রসঙ্গ আসবে? এমন অভিযোগ তো পুরুষের বেলায়ও আসতে পারে। তাহলে কি যে কোনো কিছুর বিনিময়ে নারীকেই সব সময় সম্পর্কে লেগে থাকতে হবে? পুরুষকে সম্পর্কের যত্ন নিতে হবে না? সব দায়ভার কি কেবল নারীর? নারী স্বামী পরিত্যক্ত, নির্যাতিত কিংবা অসুখী হলেও সে দায়ভার কি তার? স্বামী বিচ্ছেদ চাইলেও সমাজ কেন নারীর দিকেই আঙুল তোলে? সব সময় নারীর প্রতিই এ অসম প্রত্যাশা ও দাবি কেন তোলা হয়?

এর মধ্যে একটি পোস্টের বক্তব্য ছিল এমন, ‘জাস্টিন ট্রুডোর ক্ষমতা, বিল গেটসের টাকা, হাকিমির জনপ্রিয়তা, হুমায়ুন ফরিদীর ভালোবাসা, তাহসানের কণ্ঠ কিংবা হৃত্বিক রোশানের স্মার্টনেস। কোনো কিছুই নারীকে আটকাতে পারে নাই, বলতে পারবেন নারী কিসে আটকায়?’ মুহূর্তেই এ পোস্ট যেন ট্রেন্ডিংয়ে পরিণত হয়ে যায়।
এই ফেসবুক পোস্টে যেসব পুরুষের নাম নেওয়া হয়েছে তাঁরা সবাই–ই স্বনামধন্য; এবং তাঁরা কেউই ভিক্টিম নন। পারস্পরিক বোঝাপোড়ার ভিত্তিতেই তাঁরা সঙ্গীর থেকে আলাদা হয়েছেন বা বিচ্ছেদের পথ বেছে নিয়েছেন। তবে কেন কেবল নারীর প্রতি উঠল ‘আটকে না থাকা’ বা হাল ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ! আর এ অভিযোগের মাধ্যমেই দেওয়া হলো এমন পরোক্ষ ইঙ্গিত যে কোনো একটা কিছুর বিনিময়েই নারী সব সময় সম্পর্কে থাকেন।

যে কোন সম্পর্কেই নারী–পুরুষের কিছু নির্দিষ্ট সামাজিক ভূমিকা থাকে। ঐতিহ্যগতভাবে এবং যুগ যুগ ধরে পুরুষ বাইরে আর নারী ঘরের দায়িত্বে নিয়োজিত। ঘর ভাঙলে পুরোটা দায় তাই নারীর ওপরই বর্তায়।

তিনি স্বামী পরিত্যক্ত, নির্যাতিত কিংবা অসুখী হলেও সে দায় তাঁর। স্বামী বিচ্ছেদ চাইলেও সমাজ নারী প্রতিই আঙুল তোলে। এখন প্রশ্ন হলো, নারীর প্রতি কেন এই অসম প্রত্যাশা ও দাবি? এখানে আবার তুলতে হয় সেই ‘শাবানা সিনড্রোম’–এর কথা। শাবানা আমাদের দেখিয়েছেন, নারীকে হতে হবে ধরিত্রীর মতো সর্বংসহা। সবকিছু মেনে নিয়ে সবাইকে আপন করে নিতে হবে। আত্মত্যাগই হবে তার পরম ধর্ম। বিনিময়ে নারী পাবেন সংসারের প্রাণকেন্দ্র হওয়ার সম্মান।

নারী কিসে আটকায়? এ বিষয়টি নিয়ে যখন আলোচনা চলছে তখন পুরুষ কিসে আটকায়? এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জনকণ্ঠের প্রতিবেদকের টাইমলাইনে পঞ্চাশ জনেরও বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারী তাদের মতামত জানিয়েছেন

এদের মধ্যে অপূর্ণতা দ্রিমিত লিখেছেন, পুরুষ আটকায় প্রথমে রুপে, তারপর ন্যাকামিতে, তারপর গুণে,বয়স বাড়লে মানসিক শান্তিতে। খন্দকার শরিফুল হাসান উজ্জল লিখেছেন, দায়িত্বে আর কর্তব্যে। রেজা খান লিখেছেন, নারীর বিশ্বাসে। আমিন হায়দার লিখেছেন, পুরুষ আটকায় টাকায়। মেহেদি হাসান লিখেছেন, পুরুষ আটকায় মেয়ে লোকের ফাঁদে।  তসলিম নওয়াজ লিখেছেন, নারীর  যত্ন ও রান্নায়। রুহুল আমিন লিখেছেন, মায়ায়। জামাল ভূইয়া লিখেছেন, দায়িত্বে। সাইফুল ইসলাম সোহাগ লিখেছেন, পুরুষ কখনো আটকায় না, পোষ মানার ভান ধরে মাত্র। ফিরোজ আলম লিখেছেন, মায়ার জালে।ফেরদৌসী আজম আফিয়া লিখেছেন, ভালোবাসায়। জিন্নাতুন নুর লিখেছেন, একাধিক নারীতে। আনিসুর রহমান লিখেছেন, যাতাকলে। জাহাঙ্গীর লিখেছেন, মানসিক শান্তিতে, সৈয়দ উসমান লিখেছেন, অন্ধ ভালোবাসায়, চোখের আলো ফিরে পেলে আটকিয়ে রাখা ইস্পাত কঠিন। জামাল উদ্দিন লিখেছেন, পুরুষ আটকায় তার দায়িত্ববোধে। কামরুজ্জামান লিখেছেন, নারীর রুপে। মাহবুবা আকতার লিখেছেন, কোথাও আটকায় না এরা ভাসমান, বাধ্য হয়ে থাকে।আলি হোসেন লিখেছেন, মায়ায় ও কেয়ারিং এ। শামিম আহমেদ লিখেছেন, মানসিক শান্তি, যত্ন,ও রান্নায়।

এরকম আরও অনেকেই বিভিন্ন রকমের মত প্রকাশ করেছেন পুরুষ কিসে আটকায় তা নিয়ে।

সব শেষে যদি বলি তবে একটি কথা আমাকে বলতেই হবে তা হলো, নারীকে ছোট বা হেয় করতে এমন প্রসঙ্গ আনা অবান্তর। কোনো মানুষই কোনো কিছুতে আটকে থাকে না। আবার কোনো কিছুকে ছেড়েও যেতে পারে না। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। সে হোক নারী কিংবা পুরুষ। এই আটকে থাকাটা মূলত সম্পর্ক, মায়া, ভালোবাসা, দায়িত্ব এবং দায়বোধ উভয় দিক থেকেই তৈরি হয়। এক তরফাভাবে কখনোই কেউ দায়ী নয়।

Leave a Comment