বাংলাদেশে

৫০ বছর ধরে মন ভরাচ্ছে সিরাজের ঐতিহ্যবাহী চপ

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার পৌর সদরে চপ বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। সুদীর্ঘ চার যুগ ধরে চপ বিক্রি করছেন তিনি। “সিরাজের চপ” খেতে মজাদার। তাই মানুষের কাছে সমানতালে চাহিদাও রয়েছে বেশ। কাছের ও দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিকেলে ভিড় জমায় সিরাজের চপের দোকানে।

দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে খেতে বা কিনতে হয় চপ। ঐতিহ্য বহনের পাশাপাশি প্রায় ৫০ বছর ধরে অত্র অঞ্চলের ভোজনরসিক মানুষের মন ভরাচ্ছে সিরাজের চপ।

খবর নিয়ে জানা গেছে, সিরাজুল ইসলামের বয়স ৬৬ বছর। ১৫ বছর বয়সে তিনি প্রথমে বাবুর্চির কাজ করতেন। ওই বয়সেই নিজের কিছু একটা করার আগ্রহ নিয়ে শুরু করেন চপ তৈরি করে বিক্রি করা। সেই থেকে শুরু। এরপর দিনে দিনে তার চপের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে অত্র এলাকা জুড়ে। শুরুতে এক টাকা দুই টাকায় বিক্রি হলেও এখন প্রতি পিচ চপ দশ টাকায় বিক্রি করা হয়।

আগে প্রতিদিন গড়ে দুইশ চপ বিক্রি করলেও এখন তিনি দশ টাকা করে গড়ে প্রতিদিন প্রায় চারশো পিচ চপ বিক্রি করেন। পরিমাণ মতো ভেজালমুক্ত মশলা, বাছাই করা আলু,খাসির মাংসের কিমা দিয়ে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ভাবে তৈরিই চপের বৈশিষ্ট্য। খেতে খুবই মজাদার ও সুস্বাদু। এ কারণেই মানুষের কাছে সিরাজের চপ পছন্দের ও জনপ্রিয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন দুপুরের পর থেকে ব্যস্ততা শুরু হয় সিরাজের। ছোট দোকানে চেয়ার-টেবিল ও বসার কোন ব্যবস্থা নেই। রাস্তার উপরে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে কিনতে হয় চপ। দোকানের মধ্যে সিরাজ নিজ হাতে ভাজেন আলু ও খাসির মাংসের কিমা দিয়ে তৈরি চপ। প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিক্রি হয়। ওই সময়ের মধ্যে সমস্ত চপ শেষ হয়ে যায়। এর মধ্যে অনেকেই না পেয়ে ফিরে যান।

সিরাজুল ইসলাম সিরাজ জনকণ্ঠকে বলেন, প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে চপ বিক্রি করছি। দিনে দিনে চাহিদা যেন বাড়ছেই। শুরুতে দাম ছিল একটাকা,এরপর দুই টাকা। কয়েক বছর আগে তিন টাকা করে প্রতিদিন গড়ে তিনশো চপ বিক্রি করতাম। তখন সংসার বেশ ভালো চলতো। এখন সবকিছুর দাম বাড়তি তাই দশ টাকা করে প্রতিদিন গড়ে প্রায় চারশো চপ বিক্রি করেও সংসার ঠিকঠাক মতো চলে না। আমার চপে ভেজাল-পচা-বাসী কোন কিছু ব্যবহার করা হয় না। সবকিছুই তরতাজা।

সিরাজ বলেন, চপের জন্য সারা বছরের আলু বগুড়া থেকে আমদানি করি। পোড়া তেল ব্যবহার করা হয় না। ফ্রেশ মশলা ও খাসির মাংসের কিমা দিয়ে প্রতিদিন ভাজা হয় চপ। দীর্ঘ এতো বছরেও অত্র অঞ্চলের মানুষের কাছে আমার হাতের চপ জনপ্রিয় ও মানুষের মন ভরাতে পারছে এটাই আমার ভালোলাগা ও স্বার্থকতা। সুনাম আর মানুষের চাহিদা ও মন ভরানোর কথা চিন্তা করেই দীর্ঘদিন ধরে এ পেশায় আছি।

ক্রেতা ও পৌরসদরের ছোলনা গ্রামের বাসিন্দা ও ব্যাবসায়ী মিজানুর রহমান মিজান জনকণ্ঠকে বলেন, সিরাজের চপ নামকরা চপ। সবার কাছে জনপ্রিয়। খেতেও সুস্বাদু। স্ত্রীকে নিয়ে বাজারে এসেছি তাই মনে করলাম সিরাজের চপ খাই। কিন্তু সিরিয়ালে দাড়িয়ে প্রায় আধাঘন্টা পর দশটি চপ কিনেছি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ফরিদপুর জর্জ কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট সেলিমুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, ছোটকাল থেকেই সিরাজের চপ খেয়ে আসছি। ছোটকালে দুইটাকা করে কিনে খেতাম। এখন দশ টাকা। প্রায়ই চপ খাওয়া হয়। সিরাজের চপ এক নামে সবার কাছে পরিচিত। যে একবার খেয়েছেন তার অবশ্যই মনে রাখতে হবে।

চপ খেতে আসা পৌরসভার সোতাশি গ্রামের বাসিন্দা ও ঠিকাদার শাহিনুজ্জামান খান জনকণ্ঠকে বলেন,দীর্ঘ প্রায় চল্লিশ  বছর ধরে এ চপ খেয়ে আসছি। সময় পেলেই খাওয়া হয়। স্থানীয় ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে চপ খেতে আসে। এ পর্যন্ত যেখানে যতো প্রকার চপ খেয়েছি সিরাজের চপের মতো এত স্বাদ এর আগে আমি আর কোথাও পাইনি। সেই স্বাদ। তাই মানুষের কাছে এতো জনপ্রিয়। সিরিয়াল ছাড়া চপ কেনা যায় না। তারপরও যেনো মানুষের চাহিদা লেগেই থাকে।

চতুল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শরিফ সেলিমুজ্জামান লিটু জনকণ্ঠকে বলেন,অত্র এলাকার মধ্যে সিরাজের চপ বেশ নামকরা। একনামে সবার কাছে পরিচিত। সিরাজের চপের নাম শুনলেই জিভে জল চলে আসে। এখনও সুযোগ পেলেই খাওয়া হয়।

এ বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রাক্তন পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খালেদুর রহমান বলেন, তেলে ভাজা নানান খাবারের মধ্যে সিরাজের চপ একটি জনপ্রিয় ও পরিচিত নাম। অনেকটা স্বাস্থ্য সম্মত উপায়ে তৈরি করা হয় বলে শুনেছি। তার হাতের চপ খেয়ে কেউ অসুস্থ এ কথা শুনিনি।

বোয়ালমারী পৌরসভার মেয়র সেলিম রেজা লিপন মিয়া বলেন, সিরাজের চপ মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় ও পরিচিত। বেশ নাম করা। খেতে সুস্বাদু।  দীর্ঘ বছর ধরে তিনি সুনামের সঙ্গে চপ বিক্রি করছেন। আমি নিজেও তার চপ খেয়ে থাকি। বোয়ালমারীতে এখনও নানা খাবারের মধ্যে সিরাজের চপ একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার।

Related posts

শুক্রবার থেকে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু

Samar Khan

ঢাকা থেকে কক্সবাজার মাত্র ১৮৮ টাকায়!

Samar Khan

কেন ঢাকায় কাকের সংখ্যা কমছে?

Megh Bristy

Leave a Comment