বাংলাদেশে

নামছে বন্যার পানি, ক্ষত ও দুর্দশার গ্লানি চট্টগ্রামে

সপ্তাহব্যাপী মুষুলধারে বর্ষণে সৃষ্ট ভয়াবহ জলজট ও পাহাড়ি ঢলে পানি কমেছে। তবে রেখে গেছে রক্তাক্ত ক্ষত আর দুঃখ দুর্দশার গ্লানি। বান্দরবান ও চট্টগ্রাম জেলায় এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। আংশিক ও সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে অসংখ্য বাড়িঘর। বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা দেবে গেছে। ফাটল হয়েছে অনেক স্থানে। এসব এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

ব্যাপক জলাবদ্ধতায় চট্টগ্রাম মহানগরী আর পাহাড়ি ঢলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, পার্বত্য জেলা বান্দরবান সদর ও ৭ উপজেলা এবং কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়ায় ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে। বুধবার রাত থেকে এসব এলাকার অধিকাংশ স্থানে বানের পানি সরে গেছে। তবে বানভাসীদের দুর্গতি সীমাহীন। হাজার হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বন্যার পানিতে বন্দী ছিল এসব এলাকার প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষ। বিভিন্ন স্থানে এখনও তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। কিছু এলাকায় এখনও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্কও পুরোপুরিভাবে স্থাপিত হয়নি। এসব এলাকায় ২২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তন্মধ্যে বান্দরবানে ৮, সাতকানিয়ায় ৬, লোহাগাড়ায় ৪, চন্দনাইশে ২, রাউজানে ১, চট্টগ্রাম মহানগরে ১ জন। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে কেউ কেউ নিখোঁজ রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় বিস্তারিত এখনও জানা যায়নি।

বৃহস্পতিবার থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক যোগাযোগ পরিপূর্ণভাবে চালু হয়েছে। বান্দরবানের সঙ্গেও সড়ক যোগাযোগ পুনঃস্থাপিত হয়েছে। তবে জেলা সদরের সঙ্গে এর ৭ উপজেলার সড়ক যোগাযোগ পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে পর্যটন এলাকা সাজেকের সঙ্গে খাগড়াছড়ির সড়ক যোগাযোগ সচল হয়েছে। সাজেকে আটকে থাকা সকল পর্যটক নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যেতে সক্ষম হয়েছেন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, আজ শুক্রবার ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করার কর্মসূচি রয়েছে। টানা বর্ষণে চট্টগ্রাম বিভাগের দুর্গত মানুষের জন্য ৭০ লাখ টাকা, ১শ টন চাল ও ২১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার সরকার পক্ষ থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে ১০ লাখ নগদ টাকা, ১শ টন চাল এবং ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার প্রেরণ করা হয়েছে।

সরেজমিন পরিদর্শন শেষে জনকণ্ঠের প্রতিনিধিদের প্রেরিত সংবাদে বলা হয়েছে, সাতকানিয়া, দোহাজারী, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া এবং কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব এলাকার অধিকাংশ সড়ক নষ্ট হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন অংশ যেমন দেবে গেছে তেমনি বিটুমিন ছাল উপড়ে গিয়ে একাকার হয়ে আছে।

চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের দুর্গত এলাকাসমূহে ৮ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি ছিল। জেলার সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও চন্দনাইশ এলাকা বিপর্যস্তভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি সরে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে নিজ নিজ বসতবাড়ি ভিটায় ফিরলেও বন্যায় মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে তাদের মাঝে। বর্তমানে এসব এলাকায় একদিকে যেমন সুপেয় পানির সংকট বিদ্যমান তেমনি বিভিন্ন পয়েন্টে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।

ফলে অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে। নষ্ট হয়েছে ফসলী জমি, সড়ক মহাসড়ক এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলাসমূহের অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাট। পাহাড়ী ঢলের পানিতে নেমে আসা পলিতে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে।

বর্ষণ ও উচ্চমাত্রার জোয়ারের চাপ কমে যাওয়ার পর চট্টগ্রাম মহানগরী ও দক্ষিণ চট্টগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সড়ক থেকে নেমে গেছে পানি। ফলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। তবে পানি নেমে যাওয়ার পর বেরিয়ে এসেছে সড়কের স্থানে স্থানে ক্ষতচিহ্ন। গাড়িগুলোকে চলাচল করতে হচ্ছে অতি সতর্কতায় ও ধীরগতিতে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় লাখো বাসিন্দা এখনও দুর্ভোগে।

বিশেষ করে নিচু এলাকা থেকে এখনও পানি না সরায় বাড়ি ফিরতে পারছেন না অনেকে। বন্যায় আমন বীজতলা তলিয়ে গিয়ে চারা নষ্ট হওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে কৃষকের। পাহাড়ী ঢলে বান্দরবান শহর এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার পর সেখান থেকে এখন পানি সরেছে। তবে সাত উপজেলা থেকে পানি এখনও সম্পূর্ণভাবে সরে যায়নি।

চট্টগ্রাম মহানগর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে জলজট পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। অর্থাৎ আটকে থাকা বৃষ্টির পানি সরে গেছে। এবারের জলজটে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মহানগরীর বহদ্দারহাট, চাদঁগাঁও, মুরাদপুর, ষোলশহর, বাকলিয়া, শুলকবহর, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, কোরবানিগঞ্জ, আসাদগঞ্জসহ সন্নিহিত বিভিন্ন এলাকা।

এসব এলাকায় বাড়িঘরে পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে মানুষের গৃহস্থালি সামগ্রি। এছাড়া ছোটখাট দোকানপাটের বিভিন্ন পণ্য সামগ্রি। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটসমূহের মেরামতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃকপক্ষ পৃথক পৃথকভাবে নিরীক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছে।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী দক্ষিণ লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, কক্সবাজারের পেকুয়া ও চকরিয়া উপজেলার অনেক গ্রাম এখনও পানির নিচে। সেখানে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানি ও খাবারের অভাব। রান্নার চুলা  জ্বালানো সম্ভব না হওয়ায় তারা এখন খাবারের জন্য ত্রাণনির্ভর হয়ে পড়েছেন।

সড়ক থেকে পানি নেমে যাওয়ায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক পুরোপুরি চালু হলেও প্রান্তিক পর্যায়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে পথঘাট। এদিকে নগরীতে জলজটে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে এবং উপজেলায় পাহাড়ি ঢল ও বন্যার পানিতে কয়েকশ কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

চট্টগ্রামে প্রতি বছরই ছোটখাটো বন্যার প্রভাব পড়ে। ২০১৭ সালের বন্যায়ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশ থেকে দোহাজারীর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি ছিল। তবে পুরোপুরিভাবে দুইদিন সড়ক যোগাযোগ বন্ধ ছিল না। গত বুধবার এ সড়কে আংশিক যান চলাচল শুরু করলেও  বৃহস্পতিবার দূরপাল্লার বাস পুরোদমে যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। তবে যাত্রীদের কাছ থেকে গলাকাটা ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে পেকুয়া, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ এলাকায় বন্যার পানি পুরোপুরি না নামায় যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও স্থবির হয়ে আছে।

স্যানিটেশন সমস্যা
সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, দোহাজারি ও পেকুয়া উপজেলার উপজেলার তিন লাখ বাসিন্দা পানিবন্দী তিনদিন। চারদিকে পানি থাকায় এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত না থাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দিন কাটিয়েছে বেশিরভাগ গ্রামের বাসিন্দারা। যারা পানি মাড়িয়ে দূর আত্মীয় স্বজনের বাসায় গেছেন তারা কোনোভাবে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেলেও নিজ বাড়িতে পানির সঙ্গেই চলছে অনেকের বসবাস। খাদ্য সংকটের পাশাপাশি তারা পড়েছেন  স্যানিটেশন সমস্যায়। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতেও পানি সংকটের কারণে টয়লেটগুলোর চিত্র অস্বাস্থ্যকর।

খাবারের জন্য হাহাকার
খাবার সংকট নিয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে অসুস্থ ও ছোট শিশুরা। এখনও পানির নিচে সাতকানিয়ার ১৭ ইউনিয়ন। এর মধ্যে চরতির বাসিন্দারা জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া ত্রাণ সহায়তা পেলেও বাকি ইউনিয়নগুলোর অবস্থা করুণ। শুধু তাই নয়, ইউনিয়নগুলোতে গত তিনদিন যাবৎ খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকট দেখা দেওয়ায় বেশ ক্ষোভ মানুষের মধ্যে।

সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সংসদ সদস্য আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী চরতীতে ত্রাণ সামগ্রী ও নগদ অর্থ বিতরণ করেন। এ সময় বানভাসী বিপুলসংখ্যক মানুষের সারি দেখা যায়। দীর্ঘ লাইন ধরে ত্রাণ নিয়েছেন চরতী ইউনিয়নের বাসিন্দারা।

অপরদিকে চন্দনাইশের ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে কয়েকটি এলাকায় ত্রাণ সহায়তা পাওয়া গেলেও অধিকাংশ ইউনিয়নের বাসিন্দারা ত্রাণ পাননি বলে অভিযোগ ওঠেছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী সকালে কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ করেন। তবে পানিবন্দী থাকা সকল এলাকায় এখনো ত্রাণ পৌঁছায়নি।

এছাড়া পেকুয়া এখনও পানিবন্দী হওয়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যগত জটিলতা শুরু হয়েছে। প্রায় গ্রামেই ডায়রিয়ার প্রকোপ শুরু হয়েছে। পুরো উপজেলা তলিয়ে যাওয়ায় সেবা সাধারণ জনগণ সেবা নিতে আসতে পারছে না হাসপাতালে। উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় ঝুঁকিতে সেখানের হাজার হাজার পরিবার। সকালে শুকনো খাবার ও চিকিৎসা সংক্রান্ত ওষুধ-সরঞ্জাম নিয়ে সেখানে নারী চিকিৎসকসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সেখানে গিয়েছেন ত্রাণ নিয়ে।

বাড়ছে মৃত্যু
বানের পানিতে ডুবে এবার চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় প্রাথমিকভাবে শিশুসহ ১৫ জনের মৃত্যু হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তর। এখনও অনেক ইউনিয়নে নিখোঁজ হওয়া স্বজনদের খোঁজ না মেলায় তারা আদৌ বেঁচে আছেন না পানিতে তলিয়ে গেছেন সে বিষয়ে নিশ্চিত নয় পরিবারগুলো। বিশেষ করে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় সাতকানিয়া, চকরিয়া, চন্দনাইশ ও লোহাগাড়া এলাকার পানিবন্দি মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় স্বজনরা শঙ্কায় রয়েছে।

লোহাগাড়ায় বিধ্বস্ত দুই শতাধিক বসতঘর
লোহাগাড়া থেকে জনকণ্ঠের সংবাদদাতা জানিয়েছেন, অতিবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। বিধ্বস্থ হয়েছে ২ শতাধিক বসতঘর। পানির ¯্রােতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৪ ব্যক্তি। ৫ দিনের বর্ষণে উপজেলার টংকাবতী নদী, ঢলু, হাঙ্গর ও হাতিয়াসহ বিভিন্ন খাল আর ছড়ার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গেছে বিভিন্ন স্থানে। তলিয়ে গেছে ফসলের খেত, মৎস্য প্রকল্প ও পুকুর। ভেঙ্গেছে এলাকার বিভিন্ন গ্রামের রাস্তা, ব্রিজ ও কালভার্ট। জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে। সংকট পড়েছে বিশুদ্ধ পানির।

উপজেলার প্রায় সব গ্রামে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ৩ দিন পর গত বুধবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলা সদরে সরবরাহ করা হয়েছে। অন্যান্য এলাকায় পরদিন বৃহস্পতিবার থেকে বিদুুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। এবারের বর্ষণে উপজেলার প্রায় সব গ্রামেই ক্ষতি হয়েছে, জানান জনপ্রতিনিধিগণ। তবে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় এখনও সম্ভব হয়নি। ক্ষতির পরিমাণ কী পর্যন্ত হতে পারে তা নির্ণয় করা কঠিন ও সময়সাপেক্ষ।

লোহাগাড়া উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে কিছু খাবার বিতরণ করা হয়েছে গত ৯ আগস্ট বুধবার। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকেও কিছু ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান লোহাগাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ রাশেদুল ইসলাম। তবে এসব ত্রাণ সহায়তার পরিমাণ চাহিদার তুলনায় অনেক কম বলে মনে করেন এলাকার সচেতন মহল।

লোহাগাড়ায় পানির স্রোতে যে ৪ জন মারা গেছেন তারা হলেন বিজিসি ট্রাস্টের কম্পিউটার সায়েন্সের ১ম বর্ষের ছাত্র আমিরাবাদের জুনাইদুল ইসলাম (২২), কৃষক আছহাব মিয়া (৬৫), মো. সাকিব (২০) ও আব্দুল মাবুদ (৪০)। এছাড়াও বড়হাতিয়া এশাতুল উলুম মাদ্রাসার ছাত্র আমির হোসেন (১৪) পুকুরে ডুবে মারা গেছেন গত ৭ আগস্ট বিকেলে।

বান্দরবান সংবাদদাতা জানান, বান্দরবানে সাতদিন পর বৃষ্টিপাত কমায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে। এবারের ভয়াবহ বন্যায় বান্দরবানে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বান্দরবানের সঙ্গে চট্রগ্রামের সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হলেও বান্দরবান সদরের সঙ্গে ৭ উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ সংযোগ এখনও বন্ধ রয়েছে।

এদিকে টানা পাঁচ দিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় জেলাজুড়ে খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সেনাবাহিনী, বান্দরবান পৌরসভা ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের পক্ষ থেকে খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা জানান, বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় ৭ দিন পর বান্দরবান জেলায় বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। অধিকাংশ প্লাবিত এলাকায় বন্যার পানি নেমে গেছে। তবে বান্দরবান-কেরানীহাট-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের পানি ও পাহাড় ধসে রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়নি।

এদিকে জেলা সদরের বালাঘাটা, কালাঘাটা, মেম্বার পাড়া, আর্মীপাড়া, শেরেবাংলা নগর, ইসলামপুর, ওয়াপদা ব্রিজ এলাকা এবং লামা, আলীকদম উপজেলায় অন্যা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও বিশুদ্ধ খাবার পানের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।  এখনো জেলায় দুথশতাধিক আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে কয়েক হাজার মানুষ।

গত বুধবার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সোনাইছড়ি থেকে আরও ১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের নাম খংচা মারমা। এর আগে সদরে কালাঘাটা গোদারপাড় এলাকায় পাহাড় ধসে মা-মেয়ে ২ জনের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন নূর নাহার (৪২) ও সাবুকননেছা (১৪)। এছাড়াও আলীকদমে বন্যায় পানিতে ডুবে ১ জনের মৃত্যু হয়। নিহতের নাম পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, নাইক্ষ্যংছড়িতে ও টংকাবর্তীতে বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে ২ জন নিহত হয়েছে।

এ বিষয়ে বান্দরবান পৌরসভার মেয়র সৌরভ দাস শেখর বলেন, বান্দরবানে বন্যায় প্লাবিত অধিকাংশ এলাকা থেকে পানি নেমে গেলেও প্লাবিত এলাকাগুলোতে কাদা-মাটি এবং ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করার কাজ করছে পৌরসভা। বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট হওয়ায় বান্দরবান পৌরসভা ও সেনাবাহিনী খাবার পানি বিতরণ করছে বলে জানেন তিনি।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে বান্দরবান জেলার সঙ্গে জেলায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বান্দরবান সদর ও লামা উপজেলা। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেনাবাহিনী, প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি, পৌরসভা, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা একসাথে সমন্বয় করে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলয় কাজ করছেন।

পেকুয়ায় দুর্গতদের পাশে নৌবাহিনী
অতিবৃষ্টি এবং সমুদ্রের জোয়ারে প্লাবিত পানিবন্দি পেকুয়ায় স্থানীয় দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের ত্রাণ ও খাদ্য সামগ্রি প্রদান অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। এর অংশ হিসেবে  বৃহস্পতিবার পানিবন্দি স্থানীয় দরিদ্র ও অসহায় ৩০০০ পরিবারকে ত্রাণ সামগ্রী ও ১০০০ পরিবারকে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, খাদ্য সামগ্রী হিসেবে প্রতিটি পরিবারকে ০৭ দিনের চাল, আটা, ডাল, ছোলা, লবণ, মুড়ি, চিড়া, স্যালাইন, বিশুদ্ধ পানি ও পানি বিশুদ্ধীকরণ ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন সামগ্রী ও রান্নার অনুপযোগী পরিবারের মাঝে প্যাকেটজাত খাবার প্রদান করা হয়েছে।

এছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের চাহিদা অনুযায়ী, পেকুয়াস্থ নতুন সাবমেরিন ঘাঁটি ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’ সকল ধরনের সহায়তা প্রদান করছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত নৌবাহিনীর এই সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

Related posts

স্ত্রীর মৃত্যুর ১ দিন পর মারা গেলেন পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান

Asma Akter

অনার্স পাসে চাকরি দেবে, ইউনাইটেড ফাইন্যান্স, কর্মস্থল ঢাকা।

Asma Akter

উত্তরার কাঁচাবাজারের আগুন

Megh Bristy

Leave a Comment