বিশেষ সংবাদ

নাইট কুইন ও ড্রাগন ফুল

ছোটবেলায় পুঁটি/সরপুঁটিকে ইলিশের ছানা ভাবতেন না, এমন মানুষ মনে হয় কমই আছে। ঠিক তেমনি নাইট কুইনকেও ড্রাগন ফুলের ছোটবেলা মনে হয়। দুটো ফুল দেখতে প্রায় একই রকম-শুভ্র-সাদা, হলুদ রেণুুর। দুটোই মাঝরাতে ফোটে। আর বর্ষাতেই তাদের আগমন। নাইট কুইন শুধুই ফুল কিন্তু ড্রাগন ফুল থেকে ফল হয়, যা সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। নাইট কুইন আর ড্রাগন ফুল সম্পর্কে লিখেছেন- শিউলী আহমেদ

একসময় নাইট কুইন দুর্লভ একটি ফুল ছিল। কারও বাগানে ফুটলেই পত্রপত্রিকা এবং মিডিয়াতে প্রচার হয়ে যেত। ‘নাইট কুইন’ রাতে ফোটা একটি শুভ্র সতেজ ফুল। মধ্যরাতে যখন ফুলটি ফোটে তখন যেন আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে চারপাশ। নাইট কুইনের বৈজ্ঞানিক নাম- Epiphyllum oxypetalum|। ক্যাকটাস জাতীয় এ উদ্ভিদের আদি নিবাস যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চল ও মেক্সিকোয়। আমাদের দেশে এর বিস্তার ঘটেছে ফুলপ্রেমীদের হাত ধরে। এর ইংরেজি নাম Dutchmans pipe/Queen of The Night. চারা থেকে ফুল ফুটতে সময় নেয় পাঁচ থেকে সাত বছর। এর চারা তৈরি হয় পাথরকুচি গাছের মতো পাতা থেকে। নরম মাটিতে পাতা রেখে দিলে ধীরে ধীরে চারা গজায়। উঁচু ভূমি, পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত রৌদ্রোজ্জ্বল স্থানে নাইট কুইন ভালো জন্মে। পাতার রং সবুজ ও বেশ পুরু। উচ্চতা গড়ে ৪ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। খাঁজকাটা পাতার খাঁজ থেকে বের হয় কলি। ১৪ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ফুল ফোটার উপযুক্ত হয়ে ওঠে। সন্ধ্যা থেকেই একটু একটু করে পাপড়ি ছড়িয়ে দিয়ে অপার সৌন্দর্যে রাতের নীরবতায় হাজির হয় ফুলটি। রাত ১২টার পর ফুটে ওঠে নমনীয় কোমল পাপড়ির সমন্বয়ে সৃষ্ট নাইট কুইন। মাঝে রয়েছে হলদে রঙের পরাগ। ঝিরিঝিরি বাতাসে তিরতির করে পাতার কাঁপন দেখতে অসাধারণ লাগে। ভোরের আগেই নিস্তেজ হয়ে যায় বলেই ফুলটিকে দুর্লভ ফুল বলে আখ্যা দেন অনেকে। রাণীর মতো সৌন্দর্য নিয়ে রাতের গভীরে অপূর্ব সাদা ফুলটি অসাধারণ মিষ্টি সুবাস ছড়ায়। প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ নাইট কুইন ফুলের সুগন্ধ ও সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য ব্যাকুল হয়ে প্রতীক্ষা করে। রাত যত বাড়তে থাকে, ততই অন্ধকারের বুক চিরে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে মেলে ধরতে থাকে। ভোরের আলো ফোটার আগেই জীবনাবসান ঘটে নাইট কুইনের। কারণ রাতের রাণী দিনের আলো সইতে পারে না।

ড্রাগন:

প্রাচীন রূপকথা জুড়ে আছে ড্রাগন নামক ভয়ংকর শক্তিশালী এক প্রাণীর গল্প। তবে এই ড্রাগন একটা জলজ্যান্ত এক ধরনের ফণীমনসা (ক্যাকটাস) প্রজাতির ফল। গণচীনের লোকেরা একে ফায়ার ড্রাগন ফ্রুট এবং ড্রাগন পার্ল ফ্রুট বলে, থাইল্যান্ডে ড্রাগন ক্রিস্টাল, ভিয়েতনামে সুইট ড্রাগন, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়াতে ড্রাগন ফ্রুট বলে। ডিম্বাকৃতির উজ্জ্বল গোলাপি রঙের এই ফলের নাম শুনলে কেমন জানি অদ্ভুত মনে হয়। দেখলে সত্যিই কারও ড্রাগনের মতো ভয়ংকর মনে হতে পারে। কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকে। তবে এই ফল বাংলাদেশে অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এর চাষ করে অনেকেই কোটিপতি হচ্ছে। কথায় আছে ‘বৃক্ষরোপণ করে যে, সম্পদশালী হয় সে।’ অনেকে নিজেদের চাহিদা মিটানোর জন্য বারান্দা বা ছাদেও এর চাষ করছে।

ড্রাগন ফুল নাইট কুইনের মতোই মধ্যরাতে ফুটে। দেখতেও ঠিক নাইট কুইন। শুধু আকারে বিশাল। বাতাসে যখন তিরতির করে নড়ে, তখন সত্যিই এক মুহূর্ত মনে হবে কোনো ভয়ংকর ফুল! এখনই আপনাকে ধরে ফেলবে। কিন্তু পরক্ষণেই এর মিষ্টি গন্ধ আপনাকে মোহিত করে দেবে। তাই ড্রাগন ফুল ‘রাতের রাণী’ নামেও অভিহিত। ড্রাগন ফলের গাছ লতানো ইউফোরবিয়া গোত্রের ক্যাকটাসের মতো কিন্তু এর কোনো পাতা নেই। ফুল স্বপরাগায়িত। তবে মাছি, মৌমাছি ও পোকা-মাকড় এর পরাগায়ন ত্বরান্বিত করে এবং কৃত্রিম পরাগায়নও করা যেতে পারে। ড্রাগন ফুলকে বলা হয় ‘মুন ফ্লাওয়ার’ বা ‘কুইন অব দ্য নাইট’। ড্রাগন ফলের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Hylocereus undatus. এই ফল মূলত সেন্ট্রাল আমেরিকার প্রসিদ্ধ একটা ফল।

দক্ষিণ এশিয়া বিশেষ করে মালয়েশিয়াতে এ ফলের প্রবর্তন করা হয় বিংশ শতাব্দীর শেষে। বর্তমানে এ ফলটি দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ চীন, মেক্সিকো, ইসরাইল, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াসহ বাংলাদেশেও চাষ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে এ ফল প্রথম প্রবর্তন করে ২০০৭ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউ-জার্মপ্লাজম সেন্টার। এ সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ড. এম এ রহিম এ ফলের জাত নিয়ে আসেন থাইল্যান্ড, ফ্লোরিডা ও ভিয়েতনাম থেকে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এই ফলের বাইরের খোসা দেখতে রূপকথার ড্রাগনের পিঠের মতো। তাই একে ড্রাগন ফল বলে। এই ফলের খোসা নরম, কাটলে ভেতরটা দেখতে গাঢ় গোলাপি বা সাদা রঙের হয়ে থাকে এবং ফলের মধ্যে কালোজিরার মতো ছোট ছোট নরম বীজ আছে। নরম শাঁস ও মিষ্টি গন্ধযুক্ত গোলাপি বর্ণের এই ফল খেতে সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণসম্পন্ন । গাছ ১.৫ থেকে ২.৫ মিটার লম্বা হয়। একই সাথে যারা এই ফুল দুটোকে ফুটতে দেখেছেন, তারা মুগ্ধ হয়েছেন তাদের দেখে।

Related posts

ডোনাল্ডের পর ভালো কোচের আশায় তাসকিন

Samar Khan

‘৩০ ফেব্রুয়ারি’- ইতিহাসে যে দিনটি একবারই এসেছিল

Megh Bristy

৩ দিনে জমা হলো ৭২ লাখ টাকা আবিরের পরিবারের জন্য

Rubaiya Tasnim

Leave a Comment