বাংলাদেশেসর্বশেষ

কালো পলিথিনে আড়াল করে কাটা হচ্ছে সংরক্ষিত বনের পাহাড়

সবুজ ধানখেতের পাশে ৪০ ফুট উঁচু পাহাড়। এর একটি অংশে পাহাড়কে আড়াল করা হয়েছে কালো রঙের পলিথিন টানিয়ে। পলিথিনের ঘিরে কোদাল দিয়ে পাহাড় কাটছেন শ্রমিকেরা।

গতকাল শুক্রবার সকালে এই দৃশ্য চোখে পড়ে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের তুলাতলি এলাকায়; চুনতি সংরক্ষিত বনে।

লোহাগাড়া সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে চুনতি অভয়ারণ্যের পাশ ঘেঁষে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতরে তুলাতলি এলাকার অবস্থান। মহাসড়ক থেকে বনের ভেতরে মাটির মেঠো পথ দিয়ে পূর্ব দিকে দুই কিলোমিটার গেলে তুলাতলি পাহাড়ের দেখা মেলে।

গতকাল সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের একাংশ কালো পলিথিন দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে। পলিথিনে ঢাকা পাহাড়ের কাছে যেতেই শ্রমিকদের কথাবার্তা ও মাটি কাটার শব্দ শোনা গেল। পলিথিনের পর্দা সরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই দেখা গেল, আটজন শ্রমিক পাহাড়ের মাটি কাটছেন।

কথা বলতে চাইলে আবুল কাশেম নামের এক শ্রমিক প্রথম আলোকে বলেন, তিন দিন ধরে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে তাঁরা পাহাড় কাটছেন। এ কাজে তাঁদের নিযুক্ত করেছেন বুলু বড়ুয়া (৫০) নামের এক নারী।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাহাড় কাটার জন্য শ্রমিকদের যিনি নিযুক্ত করেছেন, বুলু বড়ুয়া নামের ওই নারী তুলাতলি এলাকাতেই থাকেন। তাঁর নিজের ঘরটিও বনের জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। এখন তিনি নিজের এক আত্মীয়ের জন্য ঘর তৈরি করতে ওই পাহাড় কাটছেন বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত বুলু বড়ুয়া পাহাড় কাটার কথা স্বীকার করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড়ের ওপর তাঁর একটি বসতঘর রয়েছে। পরিবারের সদস্য বেড়ে যাওয়ায় বসতঘর নির্মাণের জন্য বাধ্য হয়ে তাঁকে পাহাড় কাটতে হচ্ছে।

তুলাতলি পাহাড়টি হাতি, খ্যাঁকশিয়াল, শজারু, বন্য শূকর, বনমোরগ, ময়ূর, গুইসাপ, অজগরসহ নানা ধরনের বন্য প্রাণীর বিচরণক্ষেত্র বলে পরিবেশকর্মীরা জানিয়েছেন। প্রায় তিন মাইল বিস্তৃত পাহাড়টির ১০ শতাংশ এরই মধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে। সংরক্ষিত বনের প্রায় ৩০টি গাছও কাটা পড়েছে।

চুনতি এলাকার বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মী সানজিদা রহমানের মতে, এই পাহাড় কাটার সঙ্গে প্রভাবশালী মহলও জড়িত। তিনি প্রথম আলোকে অভিযোগ করে বলেন, সংরক্ষিত বনের পাহাড় কাটার পেছনে প্রভাবশালী কোনো মহলের ইন্ধন থাকতে পারে। বন বিভাগের যোগসাজশে বুলু বড়ুয়াকে সামনে রেখে পাহাড় কাটার কাজটি করা হচ্ছে কি না, সেটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

জানতে চাইলে চুনতি রেঞ্জের সাতগড় বন বিট কর্মকর্তা শাহ আলম হাওলাদার বলেন, পাহাড় কাটার খবর পেয়ে গত বৃহস্পতিবার ওই এলাকায় গিয়ে বসতঘর নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপরও কেউ পাহাড় কাটায় জড়িত থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. দানেশ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, সংরক্ষিত বনের পাহাড় রক্ষা করতে না পারা খুবই দুঃখজনক। পাহাড় কাটার কারণে চলাচলের পথ পরিবর্তিত হওয়ায় বিভিন্ন বন্য প্রাণী লোকালয় ও কৃষিজমিতে চলে আসে। বন্য প্রাণীর খাদ্যসংকট দেখা দেয়। এ ছাড়া ভূমিধসেরও আশঙ্কা থাকে

Related posts

গাজায় শরণার্থীশিবিরে ইসরাইলের ভয়াবহ হামলা, নিহত ৭৮

Suborna Islam

স্বপ্নের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হলেন দম্পতি নিক ও প্রিয়াঙ্কা

Megh Bristy

নামাজরত দাদিকে পিটিয়ে হত্যা করল নাতি

Megh Bristy

Leave a Comment