ঢাকার খবরবাংলাদেশেসারাদেশ

বিদ্যুতের তারে স্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন বাবা, মা ও বোন।

পানিতে পড়ে থাকা বিদ্যুতের তারে স্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন বাবা, মা ও বোন। তবে অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছে সাত মাস বয়সী হোসাইন। তার দায়িত্ব নিয়েছেন ফুফু নাসরিন আক্তার। হোসাইনের ফুফু বলেন, ‘আমারও সাত বছরের একটা ছেলে আছে। সেই ছেলেকে আমি যেভাবে লালন-পালন করি, হোসাইনকেও সেভাবেই লালন-পালন করব। আমার সন্তানের মতো করে হোসাইনকে বুকে আগলে রাখব, বড় করে তুলবো।’

গত বৃহস্পতিবার রাতে জলাবদ্ধতায় বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান হোসাইনের বাবা মিজান হাওলাদার, মা মুক্তা বেগম ও বোন লিমা। শিশু হোসাইন ঘটনার পর নানি-দাদির কাছে ছিল। তাকে ফুফু নাসরিন আক্তার লালন-পালন করার ইচ্ছা পোষণ করেন। পরে হোসাইনের নানা ও দাদার পরিবারের সম্মতিক্রমে ফুফু নাসরিন আক্তারই তাকে লালন-পালনের দায়িত্ব নেন।

জানতে চাইলে নাসরিন আক্তার আরও বলেন, ‘আমার ভাই-ভাবি ও ভাতিজি মারা গেছে। আমার ভাইয়ের ছেলেকে আমি লালন-পালন করব। জানি না, মানুষের মতো মানুষ করতে পারি কি না। তবে আমার চেষ্টায় বিন্দুমাত্র ঘাটতি থাকবে না। আল্লাহ সহায় হলে হোসাইনকে পড়ালেখা করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করে তুলব।’

ঘটনার দিন মা মুক্তা বিদ্যুতায়িত হতেই কোলে থাকা হোসাইনকে ছুড়ে মারেন। এ সময় অটোরিকশাচালক যুবক মোহাম্মদ অনিক হোসাইনকে উদ্ধার করেন। আশপাশের বাসিন্দারা হোসাইনকে ঘরে নিয়ে বুকে তেল মালিশ করেন। হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করান দুই হিজড়া। পরে নানি কুলসুম বেগমের কাছে হোসাইনকে হস্তান্তর করা হয়। শুক্রবার রাতে মিরপুর থেকে হোসাইনের বাবা-মা ও বোনের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠিতে। সেখানে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিন জনকে পাশাপাশি কবর দেওয়া হয়। হোসাইনকেও নিয়ে যাওয়া হয় ঝালকাঠিতে দাদার বাড়িতে।

ঘটনার দিন হোসাইনকে উদ্ধার করেই তার বড় বোন লিমাকে উদ্ধার করতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান যুবক অনিক। এ ঘটনায় মাতম চলছে অনিকের পরিবারেও।

নিহত অনিকের মামা আবুল কাশেম বলেন, ‘ময়নাতদন্ত শেষে অনিকের মরদেহ শুক্রবার রাত প্রায় ১২টার দিকে গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায় দাফন করা হয়। ছয় ভাই ও দুই বোনের মধ্যে অনিক ছিল ষষ্ঠ। তার বাবার নাম বাবুল মিয়া। তিনি গ্রামের বাড়িতে কৃষিকাজ করেন। অনিক ঘটনাস্থলের পাশে মামাতো ভাইদের সঙ্গে থাকত। সেখানে থেকে অটোরিকশা চালাত। মাস ছয়েক আগে হাজীপাড়ায় বিয়ে করে। পারিবারিক কারণে ঘটনার পাঁচ দিন আগে অনিকের স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দেয়। অনিক অটোরিকশা চালিয়ে বাড়িতে টাকা পাঠাত। এখন সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। ঘটনার পর থেকে পরিবারের সবাই শোকে আছে। তবু মহৎ কাজ করতে গিয়ে তার প্রাণ গেছে, এটাই প্রশান্তির বিষয়। বর্তমানে সমাজে কে কার জন্য জীবন বাজি রেখে সহায়তা করতে এগিয়ে যায়! আমার ভাগিনা প্রকৃত মানুষের, মনুষ্যত্বের পরিচয় দিয়েছে। এ কাজের জন্য আল্লাহ যেন ওকে জান্নাতবাসী করেন।’

 

Related posts

রাজনীতি ফিরবে জানলে বুয়েটে ভর্তি হতাম না: আবরার ফাহাদের ভাই

Mehedi Hasan

বাবা মাধ্যমিক পরীক্ষার ফি দিয়েছিলেন, টাকা ধার করে

Asma Akter

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে জুনিয়র শিক্ষক থাপ্পড় মারলো সিনিয়র শিক্ষককে

Megh Bristy

Leave a Comment