ঢাকার খবরসর্বশেষ

ঢাকার জলাবদ্ধতা: অচল উচ্চ ক্ষমতার পাম্প, অকেজো হয়ে পড়েছে স্লইসগেইট ও

রাজধানীর কমলাপুর স্টেডিয়াম–সংলগ্ন এলাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) পাম্পস্টেশন দিয়ে মিনিটে ৮ লাখ ৫৫ হাজার লিটার পানি নিষ্কাশন করা যায়। কিন্তু ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ার পরও স্টেশনটি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। কারণ, স্টেশনটিতে পানি যাওয়ার জন্য যেসব নালা–নর্দমা ও বক্স কালভার্ট রয়েছে, সেগুলো পুরোপুরি সচল নয়।

বৃষ্টি হলে তিনটি মাধ্যমে রাজধানীর পানি চারপাশের নদ–নদীতে গিয়ে পড়ে। এর একটি পাম্পস্টেশন। বাকি দুটি স্লুইসগেট ও খাল। ঢাকা দক্ষিণ সিটির আওতাধীন স্লুইসগেটগুলোরও বেশির ভাগ অকেজো। আর খালগুলো পানিপ্রবাহের জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত নয়। এসব কারণে নগরবাসীকে বছরের পর বছর জলাবদ্ধতার ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। নগর–পরিকল্পনাবিদ ও প্রকৌশলীরা বলছেন, জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানে সিটি করপোরেশন যে প্রক্রিয়ায় কাজ করছে, তা বিজ্ঞানসম্মত নয়। বৃষ্টির পানি সরাতে যা যা প্রয়োজন, এর সবই আছে। কিন্তু ঠিকভাবে কাজে লাগাতে না পারায় নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর দুটি পাম্পস্টেশন বুঝে নেয় ডিএসসিসি। এর একটি কমলাপুরের টিটিপাড়া এলাকায়। আরেকটি পুরান ঢাকার ধোলাইখালে বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে। টিটিপাড়ার স্টেশনে অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন পানিনিষ্কাশনের তিনটি পাম্প রয়েছে। ওয়াসার কাছ থেকে বুঝে নেওয়ার সময় এগুলোর মধে৵ দুটি পাম্প অচল ছিল। সিটি করপোরেশন একটি ঠিক করায় দুটি পাম্প সচল রয়েছে। এখনো অচল রয়েছে একটি। ওই দুই পাম্প দিয়ে ঘণ্টায় ৩ কোটি লিটারের বেশি পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব।

এই স্টেশনে কম ক্ষমতাসম্পন্ন আরও পাঁচটি পাম্প চালু থাকলে ঘণ্টায় পানি নিষ্কাশন করা যায় দেড় কোটি লিটার। তবে সমস্যা হচ্ছে, স্টেশনে ঠিকমতো পানি পৌঁছায় না। তাই ২১ সেপ্টেম্বর বৃষ্টিতে রাজধানীতে যে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছিল, সেই পানি সরাতে মাত্র একটি পাম্প চালু করতে হয়েছিল। ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র বলছে, নয়াপল্টন, সেগুনবাগিচা, কাকরাইল, শান্তিনগর, শাহজাহানপুর, মতিঝিল ও কমলাপুরের পানি এসব এলাকার নালা–নর্দমা ও কালভার্ট হয়ে টিটিপাড়া পাম্পস্টেশনে গিয়ে জমা হয়। কিন্তু এগুলো পুরোপুরি সচল নয়। আর ধোলাইখালের পাম্পস্টেশন হয়ে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুর, ওয়ারীসহ কয়েকটি এলাকার পানি বুড়িগঙ্গা নদীতে গিয়ে পড়ে। এই স্টেশনে অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন তিনটি পাম্প দিয়ে ঘণ্টায় ৮ কোটি ১০ লাখ লিটার পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব। এ স্টেশনেও ঠিকমতো পানি জমা হয় না। দক্ষিণ সিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত দুজন প্রকৌশলী প্রথম আলোকে বলেন, যেসব নালা–নর্দমা হয়ে পানি পাম্পস্টেশনে যাবে, সেগুলোর যথেষ্ট সক্ষমতা (পানিপ্রবাহের) নেই। আবার ধোলাইখাল বক্স কালভার্টের ৪০ ভাগ জায়গায় বর্জ্য জমে আছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাছ থেকে ৫৫টি স্লুইসগেট গত বছরের মার্চে বুঝে নেয় ডিএসসিসি। এর মধ্যে বেড়িবাঁধের সিকদার মেডিকেল থেকে বাবুবাজার সেতু পর্যন্ত রয়েছে ৩৭টি। বাকিগুলো কামরাঙ্গীরচরের শেষ প্রান্তে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে। এসব স্লুইসগেটের যে সক্ষমতা, তার শতভাগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ সিটির সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগের দুজন কর্মকর্তা বলেন, বেড়িবাঁধের ঢাকা প্রান্ত থেকে পাইপলাইন হয়ে ঠিকমতো পানি স্লুইসগেটে গিয়ে পৌঁছাতে পারে না। অন্যদিকে বেড়িবাঁধের পাশের জায়গা দখল হওয়ায় অনেক জায়গায় পাইপলাইনগুলো চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া জনবলসংকটে স্লুইসগেটগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা যাচ্ছে না।

সমাধান কোন পথে

ঢাকায় বিদ্যমান ড্রেনেজ নেটওয়ার্কের কিছু নির্মাণ করা হয়েছে স্বাধীনতার আগে, কিছু নব্বইয়ের দশকে। আর কিছু তৈরি করেছে সিটি করপোরেশন। স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা নিরসন করতে আগে এই ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক সচল করার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান প্রথম আলোকে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশন বিক্ষিপ্তভাবে যে কাজ করছে, তাতে সমস্যার সমাধান হবে না। নালা–নর্দমার উন্নয়নকাজ আউটলেট (যে পথ দিয়ে পানি নামে) থেকে শুরু করে শহরের ভেতর পর্যন্ত আসতে হবে। পাশাপাশি জলাধার সংরক্ষণ, খাল খনন ও কালভার্ট পরিষ্কারের কাজ নিয়মিত চালিয়ে যেতে হবে।

জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা দক্ষিণ সিটির উন্নয়নকাজের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী খায়রুল বাকের প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় রাজধানীর পানি দ্রুত নিষ্কাশন করা সম্ভব নয়। তাই পুরোনো আউটলেটের পাশাপাশি নতুন আউটলেট করার চিন্তাভাবনা করছেন তাঁরা।

Related posts

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ০৯টি পদে ১৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে

Asma Akter

পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাই, লন্ডনের প্রবাসীরা

Asma Akter

অভিযান চলছে, বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার

Asma Akter

Leave a Comment