বাংলাদেশেবিশেষ সংবাদসর্বশেষসারাদেশ

পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়ল ৪৫০০ টাকা, ডিসেম্বর থেকে কার্যকর

ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে গত ১১ দিনেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করে আসছেন দেশের পোশাক শ্রমিকরা। গত কয়েকদিনের টানা অস্থিরতার পর মজুরি বোর্ড পোশাকশ্রমিকদের নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা দিতে যাচ্ছে।

মঙ্গলবার সকাল ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ন্যূনতম মজুরি বোর্ড কার্যালয়ে বোর্ডের বৈঠক থেকে এই ঘোষণা আসার কথা আছে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, মজুরি বোর্ডের ষষ্ঠ দফার বৈঠকে নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হবে। আজ এই বৈঠক হওয়ার কথা।

এপ্রিলে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়। এ বোর্ড একাধিকবার বৈঠকে বসলেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। সর্বশেষ ৪র্থ বৈঠকে শ্রমিকপক্ষ ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়। পক্ষান্তরে মালিকপক্ষ থেকে ১০ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়, যা শ্রমিকপক্ষের প্রস্তাবের প্রায় অর্ধেক।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ন্যূনতম মজুরি ২৩-২৫ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবিতে কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন আন্দোলনে রাস্তায় নামে। সাভার, মিরপুর, টঙ্গী, আশুলিয়া, গাজীপুর এলাকায় শতাধিক কারখানায় ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে মজুরি বোর্ডের ৫ম বৈঠক মজুরি প্রস্তাব আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায় মালিকপক্ষ।

সর্বশেষ গেল বৃহস্পতিবার শ্রম ভবনে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে শাহজাহান খানের নেতৃত্বে শ্রমিক সংগঠনের নেতারা অংশ নেয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মালিকপক্ষের দেয়া প্রস্তাবকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, শ্রম মন্ত্রণালয় বাজার দরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের সুপারিশ করবে।

একাধিক শ্রমিক নেতা ও বিজিএমইএ’র নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পোশাক খাতের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি এবং মালিকদের সামর্থ্য বিবেচনা করে নতুন প্রস্তাব দেওয়া হবে। এটি ১২ হাজার টাকার কমবেশি হতে পারে। শ্রমিকপক্ষ এখনো নিজেদের নতুন প্রস্তাব চূড়ান্ত করতে পারেনি।

কারণ শ্রমিকপক্ষের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে একাধিক সংগঠন ও সাধারণ শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমেছে এবং বর্তমানে সেটি চলমান আছে। আজকের বৈঠকেই মজুরি চূড়ান্ত হতে পারে। মালিকপক্ষ-শ্রমিকপক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছতে না পারলে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হবে উভয়পক্ষ। প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটি উভয়পক্ষ মেনে নেবে।

ইতোমধ্যেই বিজিএমইএ’র তরফ থেকে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের মজুরি পর্যালোচনা করতে মজুরি বোর্ড কাজ করছে। এই মজুরি বোর্ড নতুন যে বেতন কাঠামো ঘোষণা করবে, শিল্পে যত প্রতিকূলতাই থাকুক না কেন উদ্যোক্তা সেটিই মেনে নেবে। নতুন মজুরি কাঠামো আগামী ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।

এদিকে, পোশাকশ্রমিকরা যাতে কম দামে নিত্যপণ্য কিনতে পারেন সেই ভাবনা থেকে তাদের জন্য রেশন কার্ড চালুর ইঙ্গিতও দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। তবে মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত বেতনের পরিমাণ জানা যায়নি।

মজুরি বোর্ডে পোশাক কারখানার মালিকদের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে বর্ধিত বেতনের পাশাপাশি শ্রমিকদের ফ্যামিলি কার্ড দেয়া হবে।

তিনি জানান, পরে শ্রমিকদের রেশন কার্ড দেয়া হবে, যাতে তারা কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারেন। তবে আজ বোর্ড সভায় ন্যূনতম মজুরির পরিমাণ কত নির্ধারণ করা হবে সে বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার বলেন, সরকার শ্রমিকদের ফ্যামিলি কার্ড বা রেশন কার্ড দিচ্ছে এটা খুবই ভালো উদ্যোগ।

নিম্নতম মজুরি বোর্ড ও নিম্নতম মজুরি কাঠামো: ১৯৮৬ সালের পোশাক শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ছিল ৬২৭ টাকা। ১৯৯৪ সালে তা ৪৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৯৩০ টাকা করা হয়। এরপর ২০০৬ সালে ৭৮ দশমিক ৭১ শতাংশ বাড়িয়ে ১ হাজার ৬৬২ টাকা, ২০১০ সালে ৮০ দশমিক ৫১ শতাংশ বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা, ২০১৩ সালে ৭৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩০০ টাকা এবং ২০১৮ সালে ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়।

Related posts

টানা বৃষ্টিতে পানির নিচে বান্দরবান শহর

Rishita Rupa

মাত্র 32,400 টাকায় iPhone 14 Plus, ফ্লিপকার্টের জবরদস্ত অফার!

Suborna Islam

১৩ বছর ডিভোর্সের, তবুও কেন স্বামীর পদবি ব্যবহার করেন জয়া!

Megh Bristy

Leave a Comment